নমস্কার ও মুদ্রাকথন – কালিকা পুরাণ

ষষ্ঠষষ্টিতম অধ্যায় – নমস্কার ও মুদ্রাকথনঃ ঔর্ব বলিলেন,–বেতাল ও ভৈরব এই সমস্ত মন্ত্র শ্রবণ করিয়া হর্ষোৎফুল্ল লোচনে ত্র্যম্বককে জিজ্ঞাসা করিল। ১

তাহারা বলিল,-আপনার প্রসাদে কামাখ্যার সাঙ্গ তন্ত্র শ্রবণ করিলাম। এক্ষণে নমস্কার, মুদ্রা, বলিদান, ষোড়শ উপচারের নিয়ম, মাতৃকান্যাস এবং অন্যত্র পূজার ক্রম, হে জগৎ প্রভো! এই সকল বিষয় বিস্তারপূর্বক কীর্তন করুন। এ সকল শুনিয়া আমাদের তৃপ্তি হইতেছে না। ২৪

ভগবান বলিলেন,–হে পুত্রশ্রেষ্ঠ বেতাল ও ভৈরব! তোমরা দুইজনে যাহা জিজ্ঞাসা করিলে, আমি সেই সকল বিষয় বলিতে প্রবৃত্ত হইলাম। হে নরশার্দূলদ্বয়! তোমরা একাগ্রমনে এক্ষণে শ্রবণ কর। ৫

ত্রিকোণ, ষটকোণ, অর্ধচন্দ্রাকার, প্রদক্ষিণ, দণ্ড, অষ্টাঙ্গ এবং উগ্র-এই সাত প্রকার নতি। ৬

কামাখ্যার পূজায় ঈশানকোণ অথবা উত্তরদিক প্রশস্ত; স্থণ্ডিসাদি সকল স্থানে সকল মূর্তিরই পূজা করিতে পারে। ৭

নমস্কার ও মুদ্রাকথন - কালিকা পুরাণ

নমস্কার ও মুদ্রাকথন – কালিকা পুরাণ

এক্ষণে ত্রিকোণাদির ব্যবস্থা বলা যাইতেছে;–যদি পূৰ্বমুখ হইয়া পূজা করে, পশ্চিম হইতে ঈশানকোণে যাইয়া অবস্থানের নির্দেশ করিবে। ৮

যৎকালে সাধক উত্তরমুখ হইয়া দেব পূজন করিবে, তখন দক্ষিণদিক হইতে বায়ুকোণে যাইয়া অবস্থান করিবে। ৯।

দক্ষিণ হইতে বায়ুকোণে গমন করিবে, বায়ুকোণ হইতে ঈশানকোণে গমন করিবে, তাহার পর আবার দক্ষিণে গমন করিয়া উহা ত্যাগ করিয়া অগ্নি কোণে প্রবেশ করিবে। অগ্নিকোণ হইতে নৈর্ঋতকোণে গমন করিবে, নৈর্ঋত কোণ হইতে উত্তরদিকে গমন করিবে, উত্তর হইতে অগ্নিকোণে গমন করিবে; এইরূপে ত্রিকোণাকারে দুইবার ভ্রমণ করিলে ইহা শিব ও দুর্গার প্রীতি ষটকোণী নমস্কার। ১০-১২

দক্ষিণ হইতে বায়ু কোণে গমন করিয়া সেই স্থান হইতে দক্ষিণদিকে ফিরিয়া আসিয়া যে নমস্কার করা হয়, তাহার নাম অর্ধচন্দ্র বলিয়া কীর্তিত হয়। ১৩

সাধক বর্তুলাকারে একবার প্রদক্ষিণ করিয়া যে নমস্কার করে, তাহাকে ব্রাহ্মণগণ প্রদক্ষিণ বলিয়া থাকেন। ১৪।

আপনার আসন পরিত্যাগ করিয়া উহাকে পশ্চাৎ প্রদক্ষিণ বিনা পৃথিবীতে দণ্ডবৎ পতিত হইয়া যে নমস্কার করা হয়, ঐ সৰ্ব্বদেবের আমোদপ্রদ নমস্কারকে দেবগণ দণ্ড নামে অভিহিত করেন। ১৫

পূর্বোক্ত প্রকারে পৃথিবীতে দণ্ডবৎ পতিত হইয়া হৃদয়, চিবুক, মুখ, নাসিকা হনু, ব্ৰহ্মরন্ধ্র, কণ্ঠদ্বয়দ্বারা যথাক্রমে ভূমিস্পর্শ করিয়া যে নমস্কার করা হয়, পণ্ডিতগণ উহাকে সাষ্টাঙ্গ নমস্কার বলিয়া অভিহিত করেন। ১৬

যে নমস্কারে বর্তুলাকারে তিনটি প্রদক্ষিণ করিয়া ব্ৰহ্মরন্ধ্রদ্বারা ভুমিস্পর্শ করা হয়, ঐ বিষ্ণুর তুষ্টিপ্রদ নমস্কারকে দেবগণ উগ্র বলিয়া অভিহিত করেন। ১৭

যেমন নদদিগের মধ্যে সাগর, দ্বিপদদিগের মধ্যে ব্রাহ্মণ, নদীগণের মধ্যে জাহ্নবী, দেবতাদিতের মধ্যে বিষ্ণু; সেইরূপ সকল প্রকার নমস্কারের মধ্যে উগ্ৰনামক নমস্কার প্রশস্ত। ১৮

ভক্ত সাধক ভক্তিপূর্বক ত্রিকোণাদি নমস্কার করিয়া অচির কালেই চতুৰ্বর্গ লাভ করে। ১৯

নমস্কার একটী মহাযজ্ঞ, হে ভৈরব! উহা সর্বদা সর্বপ্রকারে সকল দেবতার এবং অপরেরও প্রীতিপদ। ২০

উগ্ৰনামে যে নমস্কার, উহা সর্বদা হরির প্রীতিপ্রদ, এই নমস্কার শ্রেষ্ঠ, মহামায়ারও প্রীতিকারক। ২১।

নমস্কারসকল উক্ত হইল, এক্ষণে তোমরা দুজনে যথাক্রমে মুদ্রার পরিসংখ্যা এবং স্বরূপ শ্রবণ কর। ২২

ধেনু, সংপুট, প্রাঞ্জলি, বিল্ব, পদ্মক, নারাচ, মুণ্ড, দণ্ড, অঙ্গ, যোনি, বন্দনী, মহাযোনি, ভগ, পুটক, নিঃসঙ্গ, অর্ধচন্দ্র, অঙ্গ, দ্বিমুখ, শঙ্খ, মুষ্টিক, বক্ত্র, রন্ধ্র, ষটযোনি, বিমল, ঘট, শিখরিণী, তুঙ্গ, পুন্ড্র, অর্ধপুন্ড্র, অর্ধধেনু, সম্মিলনী, কুণ্ড, চক্র, শূল, সিংহবক্ত্র, গোমুখ, প্রোন্নাম, উন্নমন, বিম্ব, পাশুপত, শুদ্ধ, ত্যাগ, সারিণী, প্রসারিণী, উগ্ৰমুণ্ডা, কুণ্ডলী ব্যুহ, ত্রিমুখ, আসবাক্তা, যোগ, ভেদ, মোহন, বাণ, ধনু, তূণীর, এই সকল শ্রেষ্ঠমুদ্রা, এই একশত আটটি মুদ্রা ব্রহ্মা কর্তৃক কীর্তিত হইয়াছে। ২৩-২৯

হে ভৈরব! মুদ্রারহিত জপ, প্রাণায়াম, দেবতাৰ্চন, যোগ, ধ্যান, জপন এ সকলই নিষ্ফল জানিবে। হে পুত্রদ্বয়! এক্ষণে তোমরা দুজনে ঐ সকল মুদ্রার প্রত্যেকের লক্ষণ শ্রবণ কর। ৩০-৩১

নমস্কার ও মুদ্রাকথন - কালিকা পুরাণ

দক্ষিণাবর্তক্রমে দক্ষিণহস্তের মধ্যমাঙ্গুলির অগ্রভাগদ্বারা বামহস্তের তর্জনীর এবং বামহস্তের তর্জনীর সহিত দক্ষিণহস্তের মধ্যমার যোগ করিবে; এইরূপ দক্ষিণহস্তের অনামিকার সহিত বামহস্তের কনিষ্ঠা এবং বামহস্তের অনামিকার সহিত দক্ষিণহস্তের কনিষ্ঠার সংযোগ করিলে ধেনুমুদ্রা হয়; এই মুদ্রা সমুদয় দেবগণের তুষ্টি প্রদায়িনী। ৩২-৩৪।

হস্তদ্বয়ের দুইটি তল এবং অঙ্গুলীর অগ্রভাগ সংযুক্ত করিলে এবং উভয়ের অঙ্গুষ্ঠদ্বয় পাশাপাশি করিয়া রাখিলে যে মুদ্রা হয়, তাহাকে দেবগণ সংপুট নামে অভিহিত করিয়াছেন। ৩৫

এই সংপুট সকল দেবতারই সর্বদা প্রীতিপ্রদ, ধ্যান, চিন্তন এবং যোগাদিতে এই সংপুট অতি প্রশস্ত। ৩৬

হস্তদ্বয়ের তলভাগ দ্রোণীর আকারে ঈষৎ কুঞ্চিত করিয়া মধ্যস্থল শূন্য রাখিয়া পরস্পর সংযোগ করিলে যে মুদ্রা হয় তাহার নাম প্রাঞ্জলি। ৩৭

অঙ্গুষ্ঠকে অন্তর করিয়া পাণিদ্বয়ে মুষ্টি আকারে বিল্বফলের মত, পরস্পর সংযোগে যে মুদ্রা হয়, তাহার নাম বিল্বমুদ্রা। ৩৮

উভয় হস্তের মণিবন্ধ হইতে করভভোগ, দুই অঙ্গুষ্ঠ এবং দুইটি কনিষ্ঠ একত্রিত করিয়া অবশিষ্ট অঙ্গুলিত্রয় অল্প অল্প করিয়া বিস্তৃত রাখিলে যে মুদ্রা হয়, উহার নাম পদ্মমুদ্রা। ৩৯

উহা মনুষ্যদিগকে চতুৰ্বর্গ প্রদান করে। অঙ্কুষ্ঠের অগ্রভাগ দ্বারা তজ্জনীর উৰ্দ্ধরেখা ক্রমে যোগ করিলে এবং অন্যান্য অঙ্গুলী সম্যকরূপে প্রসারিত রাখিলে যে মুদ্রা হয়, তাহার নাচারমূদ্রা। ৪০-৪১

হে বেতাল ও ভৈরব! এই প্রিয়ঙ্করী নাচারমুদ্রা আমার এবং শিবার প্রীতিপ্রদ এবং সর্বদা প্রীতির নিমিত্তই হইয়া থাকে। ৪২

বামহস্তের অঙ্গুষ্ঠ ছাড়িয়া একটি মুষ্টি করিয়া দক্ষিণ হস্তের মধ্যাদি যত্নপূর্বক নত করিয়া মধ্যমার সহিত তর্জনী এবং অঙ্কুষ্ঠের অগ্র সংযুক্ত করিয়া সাধক বামমুষ্টির উপর দক্ষিণভাগে দেখাইবে। ৪৩-৪৪

ইহার নাম মুণ্ডমুদ্রা। ইহা গণনাথের সর্বোত্তম প্রীতিপ্রদায়িনী মুদ্রা। এই মুদ্রা নিখিল দেবগণের সকল কর্মে তুষ্টি প্রদান করে। ৪৫-৪৬

দক্ষিণ হস্তের অঙ্গুষ্ঠ ও মধ্যমাদি অঙ্গুলি সম্যকরূপে নত করিয়া তর্জনীকে প্রসারিত করিলে যে মুদ্রা হয়, তাহার নাম দশমুদ্রা। ৪৭

উভয় করের সকল অঙ্গুলীগুলি সংযোজিত করিয়া উভয় হস্তের কনিষ্ঠাদ্বয়কে রজ্জুতুল্য বদ্ধ ও সংযুক্ত করিয়া বামহস্তের অনামিকামূলে তাহার অগ্র ভাগের যোগ করিবে এবং দক্ষিণের মধ্যমামূলে বাম অগ্ৰ যোজিত করিবে। ৪৮-৪৯

এইরূপ যোজনা করিবার পর অঙ্গুলিগুলি আবর্তিত করিলে মধ্যে যে যোনির আকার হয়, তাহার নাম যোনিমুদ্রা। ৫০

হে ভৈরব! পঞ্চমূ-র্তি কামাখ্যা ভগবতী দুর্গার এবং কামের এই যোনিমুদ্রা অত্যন্ত প্রীতিপ্রদ। ৫১

অঞ্জলি সকল সংসক্তভাবে প্রসারিত করিয়া দক্ষিণহস্তের অঙ্গুষ্ঠের অগ্রপর্ব দ্বারা কনিষ্ঠার অগ্রভাগের যোগ করিলে যে মুদ্রা হয়, তাহার নাম অর্ধ যোনিমুদ্রা। ইহাকে বৈষ্ণবীতন্ত্রে মহাযোনি বলে। ৫২

সংপুট অথবা প্রাঞ্জলির যদি মস্তকে মস্তকে যোগ করা হয়, তাহা হইলে উহার নাম বন্ধনী মুদ্রা হয়, উহা বিষ্ণুর অতিশয় প্রমোদকারিণী। ৫৩

ঐ মুদ্রা কর্ণে সংসক্ত হইলে মহামূদ্রা নামে অভিহিত হয় এবং উহা দক্ষিণ অংশে সংসক্ত হইলে বৈষ্ণবী নামে কীর্তিত হয়। ৫৪

বৈষ্ণবীতন্ত্র প্রসঙ্গে মহাযোনিমুদ্রার বিষয় কথিত হইয়াছে। উভয় হস্তের কনিষ্ঠার মূলভাগে অঙ্গুষ্ঠাগ্র সংযোজিত করিয়া অপর অঙ্গুলিসকল বিস্তৃত করিয়া হস্ততল দুটি পরস্পর সংলগ্ন করিলে যে মুদ্রা হয়, উহার নাম ভগমুদ্রা; উহা লক্ষ্মী, বাণী ও শিবার প্রিয়। ৫৫-৫৬

দক্ষিণহস্তের সকল অঙ্গুলীর অগ্রভাগ সংযুক্ত করিয়া একান্তে বিন্যাস করিলে যে মুদ্রা হয়, তাহার নাম প্রকটমুদ্রা। ৫৭

কনিষ্ঠা, অনামিকা এবং অঙ্কুষ্ঠের অগ্রভাগ একত্র সংযুক্ত আর মধ্যমা ও তর্জনী প্রসারিত। ৫৮

হস্তদ্বয় পৃথক পৃথক কুঞ্চিত করিয়া দেবতার সন্মুখে নিদর্শন করার নাম নিঃসঙ্গমুদ্রা, ইহা নরসিংহ এবং বরাহের প্রিয়। ৫৯

দক্ষিণ হস্তের কনিষ্ঠা, অনামিকা এবং মধ্যমা আকুঞ্চিত ও তর্জনী ও অঙ্গুষ্ঠ প্রসারিত করিয়া যে মুদ্রা হয়, তাহার নাম অর্ধচন্দ্র মুদ্রা, উহা গ্রহগণের প্রীতিদায়িনী। ৬০

দক্ষিণহস্তের অঙ্গুষ্ঠ উৰ্দ্ধ করিয়া সেই অঙ্গুষ্ঠকে মধ্যে রাখিয়া তাহার উপর বামমুষ্টি স্থাপিত করিবে এবং উহারও অঙ্গুষ্ঠ ঊর্ধ্বে রাখিবে, এইরূপে যে মুদ্রা হয় তাহার নাম অঙ্গমুদ্রা। ৬১

এই মুদ্রারই এক একটি করিয়া কনিষ্ঠাদির মোচন করিলে আট প্রকার মুদ্রা হয়, উহাদের নাম ভিন্ন ভিন্ন। ৬২

যথা দ্বিমুখ, মুষ্টি, বজ্র, আবদ্ধ, বিমল, ঘট তুঙ্গ এবং পুণ্ড্র। ৬৩

নয় প্রকার বিষ্ণুমূ-র্তির অঙ্গমুদ্রার সহিত এই আট মুদ্রা যথাক্রমে প্রিয় এবং উহারা নায়িকাদিগেরও প্রিয়। ৬৪

করতলের পৃষ্ঠভাগ পরস্পর সংযুক্ত করিয়া তাহা যুগপৎ আবর্তিত করিলে এবং তর্জনীদ্বয় প্রসারিত ও সর্বতঃ প্রকারে সংসক্ত এবং সম্মুখে সংসক্ত করিলে যে মুদ্রা হয়, তাহার নাম শঙ্খমুদ্রা। ৬৫

উত্তান অঞ্জলি করিয়া দুইটী অঙ্গুষ্ঠ কনিষ্ঠাদ্বয়ের মূলে নিক্ষেপ করিবে, পরে পরে হস্তদ্বয় পরস্পর সংযুক্ত করিলে যেরূপ মুদ্রা হয়, তাহার নাম যোনিমুদ্রা; উহা দেবসমূহের তুষ্টিপ্রদায়িনী। ৬৬

দক্ষিণ হস্তের মুদ্রাতে অঙ্গুষ্ঠ উর্ধ্ব করিলে শিখরিণী মুদ্রা হয়, উহার নাম ব্রাহ্মী এবং উহা সূৰ্য্যপ্রিয়া। ৬৭

অনামিকা এবং কনিষ্ঠা এই দুই অঙ্গুলীকে ঋজুভাবে পরস্পর সংযুক্ত করিয়া মধ্যমা ও তর্জনীর যে ধেনুমুদ্রার ন্যায় বন্ধন, তাহার নাম অর্থধেনুমুদ্রা, উহা দেখাইলে চন্দ্রের প্রীতি বৰ্ধিত হয়। ৬৮

করদ্বয়ের অঙ্গুলি সকলের অগ্রভাগ এক একটি পৃথক্ করিয়া রাখিয়া তাহাদের তলদ্বয় সংযোজিত এবং অধোভাগে বিয়োজিত করিয়া অগ্র সকলের যোগ করিলে যে মূদ্রা হয়, তাহার নাম সম্মিলনীমুদ্রা। এই মুদ্রা মঙ্গলগ্রহ এবং পৃথিবীস্থিত লিঙ্গসমূহের প্রতিবর্ধিনী বলিয়া বিখ্যাত। ৬৯-৭০

দক্ষিণ হস্তের সকল অঙ্গুলি পরস্পর সংসক্ত এবং তলের কিয়ৎ অংশ আনম্র করিলে যে কুণ্ডাকার হয় উহার নাম কুণ্ডমুদ্রা; উহা বুধগ্রহ, বাণী এবং শিবা প্রিয়। ৭১

সকল অঙ্গুলির মধ্য দিয়া বাম হস্তের সকল অঙ্গুলি প্রসারিত করিয়া অগ্রভাগে সংযুক্ত করিয়া ঐ অঙ্গুষ্ঠদ্বয়কে সম্মুখে রাখিলে যে মুদ্রা হয়, তাহার নাম চক্ৰমুদ্রা, ইহা বৃহস্পতি গ্রহ, বিষ্ণু এবং শিবের প্রিয়। ৭২

দক্ষিণ করের অঙ্গুষ্ঠ এবং মধ্যমা কিঞ্চিৎ নত করিয়া অঙ্গুলিত্রয়কে অগ্রভাগে সংযুক্ত করিলে যে মুদ্রা হয়, তাহার নাম ধেনুমুদ্রা, উহা আমার, শুক্রগ্রহের এবং কার্তিকের প্রিয়। ৭৩

হস্ততলদ্বয় কুঞ্চিত করিয়া বামতলস্থ অঙ্গুলি সকলের অগ্রভাগ বামতলের মধ্যে বিন্যস্ত করিয়া দক্ষিণ হইতে বাম হস্ত কিঞ্চিৎ নিম্ন করিলে যে মুদ্রা হয়, তাহার নাম সিংহমুখী মুদ্রা। এই মুদ্রা দুর্গার, সূর্যের পুত্র শনিগ্রহের এবং চক্রীর প্রীতিপ্রদ। ৭৪

কর্ণমূলে গোমুখাকার করিলে ভগমূদ্রা হয়, উহা আমার, বিষ্ণুর এবং রাহুর সর্বদা প্রীতিদায়িনী। ৭৫

নমস্কার ও মুদ্রাকথন - কালিকা পুরাণ

মুষ্টিদ্বয় উত্তানভাবে পাশাপাশি সংযুক্ত করিয়া দক্ষিণ হস্তের কনিষ্ঠাদি অঙ্গুলি ক্রমশঃ প্রসারিত করিয়া বামহস্তের কনিষ্ঠাদি এক একটী করিয়া প্রসারিত করিলে যে আটটি মুদ্রা হয় তাহাদিগের ক্রমশঃ নাম শ্রবণ কর। যথা–প্রোল্লাস, উন্নমন, বিম্ব, পাশুপত, শুদ্ধ, ত্যাগ, সারণী ও প্রসারণী। ৭৬-৭৭

অঙ্গুলীসকল অকুঞ্চিত করিলে দক্ষিণা নামে মুদ্রা হয়, স্বহস্তের বিপর্যয় করিলে উগ্ৰনামে মুদ্রা হয়। ৭৮

এই দশটী ইন্দ্রাদি দশদিকপালের প্রীতিপ্রদ এবং সমুদয় দেবতার অতিশয় প্রীতিবর্ধন। ৭৯

অঙ্কুষ্ঠের অগ্রভাগ তর্জনীর অগ্রভাগের সহিত যুক্ত করিয়া এবং দক্ষিণ হস্তের মধ্যাদি অঙ্গুলী আকুঞ্চিত করিয়া কুণ্ডলাকার যে মুদ্রা হয়, তাহার নাম কুণ্ডলী মুদ্রা; উহা শক্তির তুষ্টিদায়িনী এবং অপরাপর দেবতাদিগেরও অতিশয় তুষ্টিকারিণী। ৮০-৮১

দক্ষিণ হস্তে অঙ্গুষ্ঠ, তর্জনী এবং মধ্যমা ও কনিষ্ঠা আকুঞ্চিত করিয়া যে মুদ্রা হইবে; উহা বিশ্বেদেবদিগের সর্বদা প্রিয়। ৮২

এই মুদ্রা সর্বদা কেতুগ্রহের প্রিয় এবং মাতৃগণেরও তুষ্টিপ্রদ। ৮৩

তর্জনী এবং অঙ্গুষ্ঠের অগ্রভাগ সংযোজিত এবং অপর অঙ্গুলিত্রয় আকুঞ্চিত করিয়া যে মুদ্রা হয়, তাহার নাম অসিবল্লী। ৮৪

এই অসিবল্লী মুদ্রা পিতৃগণের, সাধ্যগণের, রুদ্রগণের এবং বিশ্বকর্মার সৰ্ব্বদা প্রীতিজননী। ৮৫

পদদ্বয়ের তলভাগ পরস্পর সংযোজিত এবং তাহার অঙ্গুষ্ঠদ্বয় উর্দ্ধে নাভি দেশে যোজিত করিয়া তাহার উপর অঞ্জলি স্থাপন করিলে যে মুদ্রা হয়, তাহার নাম যোগ মুদ্রা ইহা যোগিনীদিগের তত্ত্ব প্রদায়িনী। ৮৬।

এই যোগ মুদ্রা সকল দেবতার পূজনে এবং চিন্তনে তুষ্টি ও প্রীতিকরী। ৮৭

পূর্বোক্ত মুদ্রা উর্ধ্বাধোভাগে যোজিত হইলে প্রাঞ্জলি নামে মুদ্রা হয়। ৮৮

 

কার্য্যের সময় আট প্রকার ভেদ করিয়া দেখাইলে ভেদ নামক মুদ্রা হয়, উহা আমার, বিষ্ণুর এবং বিধাতার প্রিয়। ৮৯

উভয় করতলে অঙ্গুষ্ঠদ্বয় নিক্ষিপ্ত করিয়া পরে অগ্রভাগদ্বারা উভয় হস্তের কনিষ্ঠাযুগলের যোগ করিবে। ৯০

অবশিষ্ট তর্জনী আদি অঙ্গুলিরও অগ্রভাগে যোগ করিয়া কনিষ্ঠাকে পৃথক করিয়া দেখাইলে যে মুদ্রা হয়, তাহার নাম সম্মোহন নামক মুদ্রা; উহা কাম, দুর্গা এবং লক্ষ্মীর প্রিয় এবং অপর সকল দেবতারও মোহন ও প্রীতিপ্রদ। ৯১-৯২

সব্য অর্থাৎ বামহস্তের মধ্যম ও অনামিকাকে ঈষৎ নম্র করিয়া তাহাদের পৃষ্ঠভাগে তদনন্তর অষ্ঠের অগ্রভাগ সংযোজিত করিয়া পরে কনিষ্ঠা এবং তৰ্জ্জুনীকে অগ্রভাগদ্বারা পরস্পর সংযুক্ত করিলে যে মুদ্রা হয়, তাহার নাম বাণমুদ্রা, উহা সকল দেবতার তুষ্টিপ্রদ। ৯৩-৯৪

উভয় হস্তের সকল অঙ্গুলী সঙ্কুচিত ও তর্জনীকে প্রসারিত করিয়া এক অঙ্কুষ্ঠের অগ্রভাগ দ্বারা অপর অঙ্গুষ্ঠের অগ্রভাগ এবং এক তর্জনীর অগ্রভাগ দ্বারা অপর তর্জনীর অগ্রভাগ যথাশক্তি প্রসারিত করিলে যে মুদ্রা হয়, তাহার নাম ধেনু মুদ্রা। ৯৫-৯৬

হে ভৈরব! সকল অঙ্গুলীর অগ্রভাগ ব্ৰহ্মতীর্থে নিয়োজিত করিলে অনামিকার পৃষ্ঠদেশে অগ্র নিয়োজিত করিলে এবং তাহাদের অভ্যন্তর তুণীরের মত শূন্য করিলে যে মুদ্রা হয়, তাহার নাম তুণীর মুদ্রা; ইহা সকলের প্রীতিবৰ্দ্ধিনী। ৯৭-৯৮

মুদ্রাতেই পূজার স্থিতি, মুদ্রার উপরেই চিন্তার আবির্ভাব হয়, মুদ্রাতেই যোগ সংলগ্ন, এই নিমিত্ত মুদ্রা সকল অত্যন্ত আমোদর। ৯৯

যে যে পূজায়, চিন্তায়, ধ্যান কার্য্যে, যজ্ঞাদিতে অথবা স্তব কার্যে হস্তের কোন ক্রিয়া না থাকে, সেই সেই সময় করদ্বরকে প্রথমে মুদ্রাযুক্ত করিবে। ১০০-১০১

যদি করদ্বয় যজ্ঞাদি কাৰ্য্যে আসক্ত হইয়াও মুদ্রা দর্শনে সক্ষম হয়, তাহা হইলে প্রথমে মুদ্রা দেখাইয়াই সেই যজ্ঞের আরম্ভ করিবে। ১০২

যদি মুদ্রাশূন্য হস্তে দেবকার্য করে, তাহা হইলে ঐ দেবকাৰ্য্য নিষ্ফল হয়, এই নিমিত্ত মুদ্রাযুক্ত হওয়াই উচিত। ১০৩

যে দেবতার বিসর্জনের সময় যে মুদ্রা দেখাইবার কথা হইয়াছে, সেই দেবতার পূজার সময় সে মুদ্রা দেখাইবে না। ১০৪

বিচক্ষণ সাধক বিসর্জনোক্ত মুদ্রাভিন্ন অপর যে কেন মুদ্রাযুক্ত হইয়া পূজনাদি সমস্ত কাৰ্য্য করিবে, কারণ, তাহা হইলে কৰ্ম্ম সকলের আধিক্য হইবে। ১০৫

এই হেতু মুদ্রাই পরে ধর্ম, মুদ্রা পুণ্যপ্রদায়িনী, মুদ্রা দেবতাদিগের আমোদ দায়িনী, এই নিমিত্ত যত্নপূর্বক মুদ্রাপ্ৰদৰ্শন করিবে। ১০৬

অর্ধযোনি, মহাযোনি, যোনিব্রাহ্মী এবং বৈষ্ণবী এই কয়টি শিব ও ত্রিপুরার বিসর্জনে উক্ত হইয়াছে। দুর্গার সর্বপ্রকার মূ-র্তিতেই এই মুদ্রাগুলি উক্ত হইয়াছে। ১০৭

যোনি, সম্পুট, মহাযোনি এই কয়েকটি মুদ্রাভিন্ন অবশিষ্ট ত্রিপঞ্চাশৎ মুদ্রা ব্যস্তভাব হেতু যে কাৰ্যের নিমিত্ত উক্ত হইয়াছে, তাহার অতিরিক্ত স্থলেও প্রয়োগ করিতে পারে। ১০৮।

নমস্কার ও মুদ্রাকথন - কালিকা পুরাণ

কিন্তু যোনি প্রভৃতি মুদ্রা ব্যস্ত ভাবে বিপরীত ফল প্রদান করে। দেবতাদিগের পরম আমোদর বলিয়া উহাদিগের নাম মুদ্রা হইয়াছে। ১০৯

হে বেতাল ও ভৈরব! পূজাকালে পূৰ্বে দেবতার তুষ্টিপ্রদ মুদ্রার স্বরূপ তোমাদিগকে বলিলাম, এক্ষণে বলিদান সকলের ক্রম শ্রবণ কর।১১০

ষটষষ্টিতম অধ্যায় সমাপ্ত। ৬৬

আরও পড়ুনঃ

শারদাতন্ত্র – কালিকা পুরাণ

কালিকা পুরাণ

Leave a Comment