প্রতিসর্গ বর্ণন – কালিকা পুরাণ

ষড়বিংশ অধ্যায় – প্রতিসর্গ বর্ণনঃ মার্কণ্ডেয় বলিলেন,–বরাহাধিষ্ঠিত বলিয়া বারাহ নামে অভিহিত এই সৃষ্টি শ্রবণ করিলে। ১।

অনন্তর, দক্ষপ্রভৃতির কৃত পৃথক পৃথক প্রতিসর্গ বর্ণিত হইতেছে। রুদ্র, বিরাটপুরুষ, ম-নু, দক্ষ এবং মরীচি প্রভৃতি মানসপুত্রগণ, প্রত্যেকে যে যে সৃষ্টি করিয়াছেন তৎসমুদায়ের নাম প্রতিসর্গ। ২

বিরাটপুত্র মনু, অন্য ছয় ম-নু সৃষ্টি করিয়া বহুতর প্রজা বৃদ্ধি করিলেন, সেই ম-নু, প্রজা সৃষ্টি করিতে অভিলাষী হইয়া প্রথমে যে ছয়টী পুত্ৰ উৎপাদন করেন, তাহারা সকলেই ম-নু। ৩-৪

তাহাদিগের নাম যথা;–স্বারোচিষ, ঔত্তমি, তামস, বৈরত, চাক্ষুস এবং মহাতেজা বিবস্বান। ৫

যক্ষ, রাক্ষস, পিশাচ, নাগ, গন্ধর্ব, কিন্নর, বিদ্যাধর, অপ্সরা, সিদ্ধ, বহুতর ভূত, বিদ্যুৎ, মেঘ, লতা, গুল্ম, তৃণ, মৎস্য, পশু, কীট এবং অন্যান্য জলজ স্থলজ প্রাণী;–স্বায়ম্ভুব ম-নু পুত্রগণের সহিত এই সমস্ত সৃজন করেন, ইহাকে তাহার প্রতিসর্গ বলা যায়। ৬-৮

স্বায়ম্ভুব পুত্র ছয় জন ম-নুও স্ব স্ব অধিকার কালে প্রত্যেকে প্রতিসর্গ করিয়া চরাচর ব্যাপ্ত করেন। ৯

ইহ জগতে, বরাহ,-যজ্ঞ যজ্ঞীয় দ্রব্য, যূপ, প্রাগ্বংশ, ধর্ম, অধর্ম এবং যাবতীয় গুণ–সৃষ্টি করেন। ১০

প্রতিসর্গ বর্ণন – কালিকা পুরাণ

প্রতিসর্গ বর্ণন - কালিকা পুরাণ

দক্ষ বহুতর প্রধান প্রধান দেবর্ষি, মহর্ষি এবং সোমপ প্রভৃতি পিতৃগণকে উৎপাদন করিয়া সৃষ্টি প্রবর্তিত করেন–ইহাই দক্ষের প্রতিসর্গ। ১১

ব্ৰহ্মার মুখ হইতে ব্রাহ্মণগণ, বাহু হইতে ক্ষত্রিয়গণ, ঊরু হইতে বৈশ্যগণ, পদতল হইতে শূদ্রগণ এবং চারি মুখ হইতে চারি বেদ উৎপন্ন হয়, ব্রহ্মার প্রতি সর্গ বলিয়া ইহার নাম ব্রাহ্মসর্গ। ১২-১৩

মরী-চি হইতে কশ্যপের উৎপত্তি; কশ্যপ হইতে সমস্ত জগৎ; দেব দৈত্য দানব প্রভৃতি তাহার সৃষ্ট, ইহা মারীচ প্রতিসর্গ। ১৪

অত্রির নেত্র হইতে চন্দ্রের উৎপত্তি, চন্দ্র হইতে জগদ্ব্যাপক চন্দ্রবংশ ইহা সোম-সর্গ বা অত্রির প্রতিসর্গ। ১৫

অথৰ্ব্ববেদ-প্রচারক অঙ্গিরা ঋষির অনেক পুত্র উৎপন্ন হয়। আর মন্ত্র যন্ত্রাদি সমস্তই অঙ্গিরার সৃষ্ট; ইহা অঙ্গিরার প্রতিসর্গ। ১৬

পুলস্ত্যর পুত্র আজ্যপ-নামক পিতৃগণ এবং বলবীৰ্য্য সমন্বিত রাক্ষসবৃন্দ ইহা পুলস্তের প্রতিসর্গ। ১৭

সর্পাদি, হস্তী, অশ্ব প্রভৃতি বহুতর প্রজা পুলহ সৃষ্টি করেন–ইহা পুলহের প্রতিসর্গ। ১৮

প্রোজ্জ্বল সূৰ্য-সন্নিভ ভূরিতেজা সৰ্ব্বজ্ঞ অষ্টাশীতি সহস্র বালখিল্য ক্রতুর পুত্র, ইহা ক্রতুর প্রতিসর্গ। ১৯।

অনল সস্নিভ ষড়শীতি-সহস্র প্রাচেতসগণ প্রাচেতার পুত্র; ইহা প্রচেতার প্রতিসর্গ। ২০

সুকালী নামে পিতৃগণ ও অরুন্ধতী-গর্ভ সম্ভূত অন্য পঞ্চাশ জন যোগী বসিষ্ঠের পুত্র, ইহার নাম বসিষ্ঠ প্রতিসর্গ। ২১

প্রতিসর্গ বর্ণন - কালিকা পুরাণ

ভৃগু হইতে ভার্গবদিগের উৎপত্তি; তাহারা দৈত্যগণের পুরোহিত, কবি এবং মহাপ্রাজ্ঞ; নিখিল জগন্মণ্ডল, তাহাদিগের দ্বারা পরিব্যাপ্ত হইল। ইহা ভার্গব প্রতিসর্গ। ২২

নারদ হইতে নানাবিধ নক্ষত্র, বিমান, প্রশ্ন-উত্তর, নৃত্য-গীত কৌতুক উৎপন্ন হয়, ইহা নারদপ্রতিসর্গ। ২৩

এই দক্ষ মরী-চি প্রভৃতি ঋষিগণ, বহুপুত্র উৎপাদনপূর্বক তাহাদিগের বিবাহ দিয়া স্বর্গ মর্ত্য পরিপূর্ণ করিলেন। ২৪

তদীয় পুত্রপৌত্রাদির সন্তান সন্ততি অদ্যপি ভুবনমণ্ডলে বর্তমান রহিয়াছে ও উৎপন্ন হইতেছে। ২৫

বিষ্ণুর নয়ন হইতে সূৰ্য্য, মন হইতে চন্দ্র, কর্ন হইতে বসু ও দশদিক, আর মুখ হইতে অগ্নি উৎপন্ন হইল; ইহা বিষ্ণুর প্রতিসর্গ। ২৬-২৭

পরে চন্দ্র, সৃষ্টির জন্য অত্রি-নেত্র হইতে প্রাদুর্ভূত হন আর সূৰ্য্য কশ্যপপত্নী অদিতি কর্তৃক পূজিত হইয়া কশ্যপের ঔরসে ও অদিতিগর্ভে উৎপন্ন হন। ২৮

প্রতিসর্গ বর্ণন - কালিকা পুরাণ

রুদ্র হইতে চতুর্বিধ ভূতগণ উৎপন্ন হইল, তন্মধ্যে কুক্কুর, বরাহ ও উষ্ট্র রূপধারী এক প্রকার; শৃগালাস্য বানরাস্য আর এক প্রকার; ভল্লুকানন বিড়ালানন অন্যপ্রকার; সিংহমুখ ব্যাঘ্রমুখ অপর প্রকার। তাহারা সকলেই নানা শাস্ত্রধারী, কামরূপী এবং মহাবল-পরাক্রান্ত। ইহা রুদ্রের প্রতিসর্গ। ২৯-৩০

হে দ্বিজোত্তমগণ! তোমাদিগকে এই প্রতিসর্গের কথা বলিলাম। এক্ষণে এক এক কল্পশেষে যে দৈনন্দিন প্রলয় হয় তাহা শ্রবণ কর। ৩১

ষড়বিংশ অধ্যায় সমাপ্ত। ২৬

আরও পরুনঃ

মৃত্যুপথযাত্রীর সেবা | অগ্নি পুরাণ | পৃথ্বীরাজ সেন | পুরাণ সমগ্র

কালিকা পুরাণ

Leave a Comment