শঙ্করাচার্য আদর্শ জীবনচরিত

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় শঙ্করাচার্য আদর্শ জীবনচরিত

শঙ্করাচার্য আদর্শ জীবনচরিত

 

শঙ্করাচার্য আদর্শ জীবনচরিত

 

শঙ্করাচার্য আদর্শ জীবনচরিত

গুরুর আশীর্বাদ নিয়ে শঙ্করাচার্য কাশীধামে এসে ব্রহ্মসূত্রের ভাষ্য রচনায় ব্রতী হলেন। কয়েকজন ভক্ত তাঁকে এ কাজে সাহায্য করতে থাকেন। তখন শাস্ত্র আলোচনা প্রসঙ্গে শঙ্করের নাম কাশীধামে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে । শোনা যায়, এই কাশীধামেই শঙ্কর একদিন ব্যাসদেবের অনুগ্রহ লাভ করেছিলেন।

একদিন শঙ্করাচার্য মণিকর্ণিকার ঘাটে স্নান করে ধ্যানে বসবেন এমন সময় এক বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ সেখানে উপস্থিত হয়ে তাকে ব্রহ্মসূত্র সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন। শঙ্করাচার্য ব্যাখ্যা করলেন। কিন্তু বৃদ্ধ তাঁর ব্যাখ্যা মানলেন না। উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। অবশেষে বৃদ্ধ কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস বলে আত্মপরিচয় দিলেন এবং বললেন, “শঙ্কর, তোমার জ্ঞান ও প্রতিভার পরিচয় পেয়ে আমি মুগ্ধ হয়েছি।

তুমি ব্রহ্মসূত্রের তাৎপর্যসহ জগতে অদ্বৈতবাদ প্রচার কর।” শঙ্করাচার্য সবিনয়ে বললেন, “আমার মাত্র ষোল বছর পরমায়ু। এই অল্প সময়ের মধ্যে আমি আর বেশি কি করতে পারব?” শঙ্করের কথা শুনে ব্যাসদেব বললেন, “তোমার পরমায়ু আরও ষোল বছর হবে।” বর্ধিত আয়ু লাভ করে শঙ্করাচার্য দশখানা উপনিষদ, গীতা, বেদান্তভাষ্য, উপদেশ সহস্র প্রভৃতি রচনা করে – ‘অদ্বৈতমত’ প্রচারের উদ্যোগ গ্রহণ করলেন।

শঙ্করাচার্য প্রয়াগে বৌদ্ধ পণ্ডিত কুমারিল ভট্টের নিকট ধর্ম বিষয়ে বিচার করার অভিমত ব্যক্ত করেন। তিনি শঙ্করকে বললেন, “তুমি আমার শিষ্য ‘মণ্ডন মিশ্রের সাথে বিচারে প্রবৃত্ত হও ; তাঁকে পরাস্ত করতে পারলে আমিও তোমার নিকট পরাজয় স্বীকার করব। কিন্তু এ বিচারে তাঁর বিদূষী পত্নী উভয় ভারতীকে মধ্যস্থ রাখতে হবে।” শঙ্কর মণ্ডন মিশ্রের উদ্দেশ্যে মাহম্মতী নগরের দিকে রওনা হলেন ।

সেখানে উপস্থিত হওয়ার পর মণ্ডন মিশ্রের সঙ্গে শঙ্করের বিচার আরম্ভ হল। আঠার দিন ধরে উভয়ে শাস্ত্র আলোচনা চালালেন। মণ্ডল পত্নী উভয় ভারতী মধ্যস্থা ছিলেন। বিচারে শঙ্করাচার্যের জয় হল । মণ্ডন মিশ্র শঙ্করাচার্যের শিষ্যত্ব গ্রহণ করলেন। এভাবে দাক্ষিণাত্যের পণ্ডিত সমাজে শঙ্করাচার্যের অপ্রতিহত প্রভাব বিস্তার লাভ করে। তিনি হিন্দু ধর্মের সুদৃঢ় প্রতিষ্ঠার প্রয়াসী হন।

 

গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন
গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

সে-কালে প্রভাবশালী বৌদ্ধ পণ্ডিতদের তিনি তর্কে পরাস্ত করেন। বৌদ্ধধর্মের অনুরাগী এক রাজা শঙ্করাচার্যের মত গ্রহণ করেন এভাবে শঙ্করাচার্য অতি দ্রুত ভারতের বিভিন্নস্থানে তার মতবাদ প্রচার করে চারটি মঠ স্থাপন করেন। দ্বারকায় সারদামঠ, পুরীতে গোবর্ধনমঠ, বদরিকাশ্রমে যোশীমঠ এবং রামেশ্বরে শৃঙ্গেরি মঠ। ঐগুলো শঙ্করাচার্যের অন্যতম কীর্তি। একদিন শঙ্করাচার্য শৃঙ্গের মঠে বসে অধ্যাপনায় রত আছেন।

এমন সময় হঠাৎ তিনি অনুভব করলেন তাঁর মা তাঁকে ডাকছেন। মায়ের অন্তিমকালের আহবান শঙ্করাচার্য শুনতে পেলেন। দ্রুত যাত্রা করলেন কালাড়ি অভিমুখে, মায়ের সন্নিকটে। সন্ন্যাসী শঙ্করাচার্য মায়ের অন্তিম সময়ে পাশে বসে ভগবৎ মহিমা গাইতে লাগলেন। মায়ের চোখে আনন্দাশ্রু দেখা গেল। পরমানন্দ লাভ করে শঙ্করের জননী ইহধাম ত্যাগ করলেন।

এবারে হিমালয়ের হাতছানি অনুভব করলেন শঙ্কর। হিমালয় অভিযানে যাত্রা শুরু করলেন তিনি। উত্তরাখন্ডের কেদারনাথ ধামই তাঁর গন্তব্য স্থান। শঙ্করের বয়স তখন মাত্র ৩২ বছর। তিনি এই কেদারনাথে মহাসমাধিতে মহাদেবের শ্রীপাদপদ্মে লীন হয়ে ভবলীলা সংবরণ করলেন।

শঙ্করাচার্যের কয়েকটি উপদেশ

১। সংসার দুঃখের আগার; জাত ব্যক্তির মৃত্যু নিশ্চিত এবং মৃত ব্যক্তির পুনর্জন্মও নিশ্চিত— এই হচ্ছে সংসারের নিয়ম ।

২। ধন, জন, জীবন, যৌবনের গর্ব করতে নেই; নিয়তি (কাল) নিমিষেই সব কিছু হরণ করে থাকে।

৩। শত্রু, মিত্র, স্ত্রী, পুত্র কোন কিছুতেই বিশেষভাবে যত্নবান হয়ো না। শীঘ্রই যদি বিষ্ণুকে লাভ করতে চাও তবে সমস্ত কিছুতে সমত্ববুদ্ধি সম্পন্ন হও।

৪। তোমার, আমার এবং অন্য সকলের মধ্যেই বিষ্ণু রয়েছেন। কারো প্রতি বিদ্বেষভাব পোষণ করো না। সকলের মধ্যে আত্মাকে (বিষ্ণুকে) দেখ এবং ভেদজ্ঞান ত্যাগ কর ।

৫। ব্রহ্ম সত্য, জগৎ মিথ্যা; জীব ব্রহ্ম ভিন্ন অন্য কিছু নয়।

৬। মায়ার প্রভাবে জীব সংসারে আবদ্ধ হয় ; ব্রহ্মজ্ঞান লাভ করে জীব মুক্তিলাভ করতে পারে।

সারাংশ

 

শঙ্করাচার্য আদর্শ জীবনচরিত

 

শঙ্করাচার্য হিন্দুধর্মকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে তৎকালীন বৌদ্ধ পণ্ডিতদের সঙ্গে তর্কযুদ্ধে পরাস্ত করেন। এভাবে শঙ্করাচার্য তার অদ্বৈতবাদ প্রচার করে দ্বারকায়, পুরীতে বদরিকাশ্রমে এবং রামেশ্বরে শৃঙ্গেরিমঠ প্রতিষ্ঠিত করেন। মাতৃভক্ত শঙ্কর মায়ের অন্তিম সময়ে তাঁর পাশে থাকায় মা পরমানন্দে দেহত্যাগ করেন। কিছুদিন পর মাত্র বত্রিশ বছর বয়সে শঙ্কর ইহলীলা সংবরণ করেন। তাঁর মতে ব্রহ্মজ্ঞান লাভ করে জীব মুক্তিলাভ করতে পারে।

আরও দেখুন :

Leave a Comment