শিব ও বুদ্ধ – ড. আর এম দেবনাথ

শিব ও বুদ্ধ – সম্পর্কে ড. আর এম দেবনাথ তার সিন্ধু থেকে হিন্দু বইতে লিখেছেন : বৈদিকধর্ম বা আর্যধর্ম বা ব্রাহ্মণ্য ধর্মের সাথে শিব ও বুদ্ধের সম্পর্ক খুবই ক্ষীণ। কিন্তু দু’জনের একজনকেও বাদ দিয়ে হিন্দুধর্ম কল্পনা করা যায় না। শিব বা মহাদেব এ অঞ্চলের আদি বাসিন্দা অর্থাৎ ভূমিপুত্রদের আদি দেবতা। আর্যদের ভারত আক্রমণের পূর্বে এ অঞ্চলের সভ্যতা ছিল সিন্ধু সভ্যতা (মেহেঞ্জোদারো, হরপ্পা ও দ্রাবিড় সভ্যতা)। এ সভ্যতার প্রধানতম দেবতা ছিলেন মহাদেব অথবা শিব। নীরদ সি চৌধুরী তাঁর গ্রন্থে (হিন্দুইজম এ রিলিজিয়ন টু লিভ বাই: অক্সফোর্ড ইন্ডিয়া পেপার ব্যাকস:১৯৯৬) শিবকে বৈদিক দেবতা ‘রুদ্রের’ সম্পর্কিত করেছেন। তবে তাঁর মতে বর্তমান কালের শিব আর বেদের দেবতা ‘রুদ্র’ অথবা পৌরাণিক কালের শিব পুরোপুরি এক নন।

শিব ও বুদ্ধ, Seated Buddha from Tapa Shotor monastery in Hadda, Afghanistan, 2nd century CE
বুদ্ধ

 

শিব ও বুদ্ধ

আমরা জানি হিন্দুর ‘ত্রিমূর্তি’ (‘ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর’) ধারণায় শিবকে অযৌক্তিকভাবে প্রলয়ের দেবতা হিসেবে কল্পনা করা হয়েছে। এই ধারণায় তিন দেবতার মধ্যে শিব একজন। কিন্তু অনেকের মতোই নীরদ চৌধুরীও এই ধারণার সাথে একমত নন। তাঁর মতে শিবের স্থান অনেক ওপরে এবং শিব ‘সম্পূর্ণ দেবতা’ (কমপ্লিট গড়)। যেসব গুণ শিবের ওপর আরোপিত হয়েছে তা অন্য কোনো দেবতার ওপর আরোপিত হয়নি। তাই শিবকে বর্ণনা করা হয়েছে ঈশ্বর, মহেশ্বর, পরমেশ্বর অথবা মহাদেব হিসেবে।

শিব কেন পরমেশ্বর বা মহাদেব তা দেখাতে গিয়ে নীরদ চৌধুরী মহাভারত থেকে উদ্ধৃতি দিয়েছেন। যুধিষ্ঠির একবার ভীষ্মকে শিব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেন। উত্তরে ভীষ্ম বলছেন : মহাদেবের গুণাবলী বর্ণনা করার ক্ষমতা কারও নেই। তিনি অদৃশ্য, কিন্তু সর্বত্র দৃশ্য। তিনি ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও ইন্দ্রের স্রষ্টা এবং তাদের ঈশ্বরও বটে। তাঁকে ব্রহ্মা থেকে পিশাচ সকলেই পূজা করেন। প্রকৃতি ও পুরুষে সর্বত্র বিরাজমান শিব। যে সকল ঋষি যোগচর্চা বলে সত্যকে লাভ করেছেন তারা সবাই শিবের ভজনা করেন। শিব ধ্বংসের ঊর্ধ্বে, তিনি মহেশ্বর এবং নিজেই ব্রাহ্মণ। তাঁর কোনো সত্তা নেই। কিন্তু তিনি সকল বিরাজমান।

মহাভারতের এই শেষে নীরদ চৌধুরী শিবকে কালীদাস কর্তৃক রূপায়িত শিবের সাথে তুলনা করেছেন। শিবভক্ত কালীদাসের কাছে হিমালয়ের তুষার শিবের হাসি। এই তুলনা শিবের সত্য ও শুভ্র রূপের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। আমরা জানি সত্যই শিব, সুন্দরই শিব। ‘সত্যম্ শিবম সুন্দরম’ এই আখ্যা হিন্দুর অন্য কোনো দেবতাকে দেওয়া হয় নি। এর অনেক কারণ আছে।

এখানে একটি কথা উল্লেখ করা যায়। দেখা যায় দেবতা রাম ও কৃষ্ণ উভয়েই মানুষের রূপ নিয়ে পৃথিবীতে এসেছেন। এসেছেন বিষ্ণুর অবতার হিসেবে। দু’জন জন্ম গ্রহণ করেছেন দুই বংশে। তাদের রয়েছে পিতা-মাতা। কিন্তু শিবের ক্ষেত্রে এর কোনোটাই সত্য নয়। শিব কারোর অবতার নন। তিনি মাটির পৃথিবীতে এসে মর্ত্যলোকের প্রেমেও নিমজ্জিত হন নি। তাঁর প্রেম দেবলোকের প্রেম। এ প্রেম সর্বকালে সত্য, তাই সুন্দর। এ জায়গাতেই অন্যান্য দেবতা থেকে শিব সম্পূর্ণ আলাদা ও অনন্য।

শিব ও বুদ্ধ, Shiva as Adiyogi in the Isha Yoga Center, Coimbatore.
শিব

ওপরের প্রেক্ষাপটে হিন্দুধর্মে শিবের অবস্থান কী তা বোঝার জন্য নীরদ চৌধুরীর মতোই মহাভারতকে ভিত্তি করা যাক। মহাভারতের শুরুতেই দেখা যায় শিব-তনয় গণেশ নিজ হাতে মহাভারত লিখছেন। অথচ আমরা জানি ব্যাসদেব মহাভারতের রচয়িতা। তা হলে প্রকৃত ঘটনাটি কী? প্রকৃত ঘটনাটি হচ্ছে ব্যাসদেব নিজের হাতে মহাভারত লেখেন নি। ব্যাসদেব (বেদব্যাস) মৌখিকভাবে তা বলেছেন। লেখার দায়িত্ব ছিল শিব-তনয় পণেশের ওপর।

গোড়াতেই শিবের সাথে মহাভারতের এই সম্পর্ক কী প্রমাণ করে? এই ঘটনাটি যে মহাভারতকে ভূমিপুত্রদের কাছে গ্রহণযোগ্য করার একটি প্রয়াস তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তা নাহলে শিবপুত্র গণেশকে দিয়ে মহাভারত লেখানোর আর কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না। অবশ্য এর আর একটি ব্যাখ্যা হতে পারে। হতে পারে ব্যাসদেব লিখতে জানতেন না। ব্যাসদের যেহেতু আর্যদের প্রতিনিধি তাই বলা যায় আর্যদের কোনো লিপি ছিল না।

মহাভারত শুরুর এই প্রসঙ্গটি মনে রেখে দেখা যাক তাতে শিব সম্পর্কে কী আছে। ‘মহাভারতে’ (অনুবাদ: রাজশেখর বসু: এম.সি. সরকার অ্যাও সঙ্গ প্রা: লি: কলকাতা, ১৯৯৪) কমপক্ষে বিশ্ব জায়গায় শিবের প্রসঙ্গ আছে। এর মধ্যে প্রধান প্রধান ঘটনাগুলো নিম্নরূপ:

The legendary Jataka collections depict the Buddha-to-be in a previous life prostrating before the past Buddha Dipankara
The legendary Jataka collections depict the Buddha-to-be in a previous life prostrating before the past Buddha Dipankara

 

১. আমরা জানি মহাভারত পাণ্ডুর পাঁচ সন্তান অর্থাৎ পঞ্চ-পাণ্ডবের বিজয় কাহিনী। এই পঞ্চ-পাণ্ডব বলে কথিত প্রধান প্রধান চরিত্র যথা: যুধিষ্ঠির, অর্জুন, ভীম, নকুল ও সহদেব কে? দেখা যায় পাণ্ডুর এই পাঁচ সন্তান শিবের বরপুত্র। এই পাঁচ পাণ্ডব বস্তুত পাঁচজন ইন্দ্র (স্বর্গের দেবতা)। মহাদেবের শাপে পাঁচ জনকেই দীর্ঘদিন পাতাল বাস করতে হয়েছে। আবার তাঁরই বরে ‘পাণ্ডব’ হিসেবে পাণ্ডুর ঘরে জন্ম লাভ করতে হয়েছে।

২. মহাভারতের তথ্যানুসারে পঞ্চ-পাণ্ডবের বিয়ে হয় একই স্ত্রী অর্থাৎ দ্রৌপদীর সাথে। তাও দেখা যায় মহাদেবের বরের কল্যাণে। দ্রুপদ কন্যা কৃষ্ণা অথবা দ্রৌপদী মহাদেবের কাছে পাঁচবার পতি কামনা করেছিলেন। তাই তিনি পঞ্চ-পাণ্ডবকে স্বামী হিসেবে পেয়েছেন।

৩. মহাভারতে আমরা দেখতে পাই যুদ্ধ জয়ের জন্য পাণ্ডবদের আশ্রয়ও শিব। দেখা যাচ্ছে মহাভারতের যুদ্ধ যখন চলছে তখন পাণ্ডব পক্ষের প্রধানতম বীর ও শ্রীকৃষ্ণের প্রিয়তম সথা অর্জুন ব্যাসদেবকে খুবই প্রণিধানযোগ্য একটি প্রশ্ন করেন। অর্জুন যুদ্ধকালীন সময়ে দেখতে পাচ্ছেন তাঁর সামনে দিয়ে ত্রিশূলধারী এক সৌম্যমূর্তি মহামানব সবসময়ই অগ্রসরমান। তিনিই প্রকৃতপক্ষে শত্রুপক্ষের সকলকে পরাস্ত করছেন। অর্জুন কিছুই করছেন না। অথচ লোকের ধারণা অর্জনই সবকিছু করছেন। এ অবস্থায় অর্জুন ব্যাসদেবকে জিজ্ঞেস করছেন । এই ত্রিশূলধারী পুরুষশ্রেষ্ঠ কে? ব্যাসদেব বলছেন : ইনিই হচ্ছেন মহাদেব।

৪. ব্যাসদেবের কাছে মহাদেবই শ্রেষ্ঠ দেবতা। তিনি অর্জুনকে বলছেন মহাদেব প্রজাপতিগণের প্রধান ও সর্বলোকেশ্বর। মহাদেবের ক্রোধে দক্ষের (আর্য প্রতিনিধি) যজ্ঞ পর হওয়ার পর দেবতারা মহাদেবকে প্রণিপাত করে তার শরণাপন্ন হন। এরপর থেকে শিবের জন্য যজ্ঞভাগ নির্দিষ্ট করা হয়। ব্যাসদেব বলছেন: পিতামহ ব্রহ্মা মহেশ্বরকে শ্রেষ্ঠ জেনে বন্দনা করতেন।

৫. আমরা সকলেই দক্ষযজ্ঞের কথা জানি। মহাদেব (শিব) আর্যদের দেবতা না হওয়ায় দক্ষ (আর্য প্রতিনিধি) তাঁর জামাতা শিবকে তাঁর আয়োজিত যজ্ঞে নিমন্ত্রণ করেন নি। শিব-পত্নী ও দক্ষ-কন্যা সতী এতে প্রচণ্ড আঘাত পান। তিনি যোগ বলে দেহত্যাগ করেন। ক্রোধে শিব সেই যজ্ঞ পণ্ড করে দেন। এ ঘটনা দ্বারা বোঝা যায় আর্যদের শক্তির চেয়ে শিবের শক্তি অনেক বেশি। শিবের এই শক্তি কার শক্তি? শিবের এই শক্তি প্রকৃতপক্ষে ভূমিপুত্রদেরই শক্তি। ভূমিপুত্রদের এই শক্তির কাছে আর্য দেবতারা মাথা নত করেন। তারপর থেকে শিবের নামেও যজ্ঞের ব্যবস্থা হয়। একেই ঘটনা মারফত জানান দেওয়া হয়েছে মাত্র।

৬. মহাভারতের এক জায়গায় ‘অমৃত মন্থনের বর্ণনা আছে। এই অমৃত পাণ করতে পারলেই পুনর্জন্মের চক্র থেকে জীবের মুক্তি হয়। এ কাহিনীতে দেখা যায় ভূমিপুত্ররা সমুদ্র মন্থন করে অমৃতের সন্ধানে নিয়োজিত। আহরিত অমৃত দেবতা ও অসুর ভাগ করে নেবে এই হচ্ছে সমঝোতা। কিন্তু সমুদ্র মন্থনের সময় পৃথিবী বিষে জর্জরিত হয়ে পড়ে। ব্রহ্মা তখন মহাদেবকে এই বিষ পাণ করতে অনুরোধ করেন।

Shiva 6 শিব ও বুদ্ধ - ড. আর এম দেবনাথ

মানবকুল ও পৃথিবীকে রক্ষা করার জন্য মহাদেব তখন বিষটুকু পাণ করে ‘নীলকণ্ঠ’ হন। তাই মহাদেবের আর এক নাম ‘নীলকণ্ঠ’। লক্ষণীয় এ ঘটনায় ব্রহ্মা কিন্তু বিষ পাণ করেননি। অপরদিকে বিষ্ণু আহরিত অমৃত থেকে ভূমিপুত্রদের বঞ্চিত করেন। শুধু তা নয়, এক ভূমিপুত্র (দানব) অমৃত পাণ করায় বিষ্ণু তার মুগুচ্ছেদ করেন। এই অন্যায় ঘটনায় দেখা যাচ্ছে মহাদেব মানবকুল অর্থাৎ ভূমিপুত্রদের কল্যাণে ব্যাপৃত। অপরদিকে আর্যদের দেবতা ব্রহ্মা ও বিষ্ণু ভূমিপুত্রদেরকে অমৃত থেকে বঞ্চিত করছেন। উদ্দেশ্য শুধু আর্যরাই অমৃত পাণ করে অমরত্ব লাভ করুক। তথাকথিত দেবাসুরের এই সংঘাতের বর্ণনা ‘কুম্ভমেলার’ ইতিহাস পাঠ করলেই জানা যায়।।

৭. মহাভারতের অন্যতম আর একটি বড় ঘটনা জরাসন্ধ বধ। জরাসন্ধ ভারতের পূর্বাঞ্চলের মহাপ্রতাপশালী রাজা। তিনি ভারতের পূর্বাঞ্চলের অন্যান্য সকল রাজার মতই কৃষ্ণ বিরোধী। কৃষ্ণ পাণ্ডবদের পরামর্শদাতা। তাই জরাসন্ধকে বধ করতে না পারলে পাণ্ডবদের জয়যাত্রা শুরু হয় না। এই যে জরাসন্ধ তিনিও প্রবল প্রতাপশালী হয়েছিলেন মহাদেবের বরে। ৮. পাণ্ডব পক্ষের প্রধানতম বীর অর্জুনের ‘পাশুপত’ অস্ত্র লাভও মহাদেবের কাছ থেকে। একথা জানা যে এই ‘পাশুপত’ অস্ত্রটি যুদ্ধ জয়ে অর্জুনের পক্ষে এক নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করে।

৯. গঙ্গা (শিবপত্নী) হিন্দুদের কাছে পবিত্রতম নদী। গঙ্গাকে বাদ দিয়ে হিন্দু অকল্পনীয়। এই গঙ্গাও স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে নামেন শিবের মস্তক বেয়ে। শিব এমনিতেই তা করেন নি। এর জন্য আর্য প্রতিনিধি ভগীরথকে শিবের আরাধনা করতে হয়েছে।

১০. মহাভারতের আর এক ঘটনা ভীষ্মবধ। ভীষ্ম (চিরকুমার) পাণ্ডব ও কৌরবদের পিতামহ। তিনি উভয়ের কাছেই সমানভাবে শ্রদ্ধেয়। কিন্তু যুদ্ধে তিনি কৌরব পক্ষের অপ্রতিদ্বন্দ্বী বীর। তাঁকে বধ করতে না পারলে পাণ্ডবদের যুদ্ধ জয় হতো না। দুর্যোধন (কৌরব) পক্ষের এই বীর ভীষ্মকে বধ করেছিলেন শিখণ্ডী। এই শিখণ্ডীই হচ্ছে অম্বা। অম্বা মহাদেবের বরে শিখণ্ডী হিসেবে জন্ম গ্রহণ করেন।

১১. সর্বোপরি রয়েছে মহাদেব সম্পর্কে শ্রীকৃষ্ণের নিজস্ব মূল্যায়ন। শ্রীকৃষ্ণ নিজে বলছেন: তিনি কঠোর তপস্যা করে মহাদেব-পার্বতীর বরলাভ করেছেন। মহাদেব-পার্বতীর কাছ থেকে যে আটটি বর শ্রীকৃষ্ণ লাভ করেন সেগুলো হচ্ছে:

ক. ধর্মে দৃঢ় নিষ্ঠা

খ. যুদ্ধে শত্রুনাশের শক্তি

গ. শ্রেষ্ঠযশ

ঘ. পরম বল

ঙ. যোগসিদ্ধি

চ. লোকপ্রিয়তা

ছ, মহাদেবের নৈকট্য এবং জ. শত শত পুত্র।

Shiva 5 শিব ও বুদ্ধ - ড. আর এম দেবনাথ

মহাভারতের উপরোক্ত ঘটনাসমূহ বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট বোঝা যায় মহাদেবই সর্বশ্রেষ্ঠ দেবতা। তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব অকপটে স্বীকার করে নিচ্ছেন মহাভারত রচয়িতা স্বয়ং ব্যাসদেব, পাণ্ডব ও কৌরবদের পিতামহ ভীষ্ম এবং সর্বোপরি শ্রীকৃষ্ণ। শ্রীকৃষ্ণ নিজে যখন বলছেন তাঁর দেবত্ব ও লোকপ্রিয়তা শিবেরই দান তখন হিন্দুধর্মে শিবের অবস্থান কী তা নিয়ে আলোচনার আর কিছু থাকে না।

মহাভারতের পর খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয়-চতুর্থ শতকের দিকেও দেখা যায় মহাদেবই প্রধানতম দেবতা। এই সময়ের অন্যতম প্রধান চরিত্র ‘চানক্য’। ‘চানক্য’ ছিলেন সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্যের (খ্রিস্টপূর্ব ৩২১-২৯৭) মন্ত্রী। এই চানক্যের নামে চালু ‘চানক্য সংগ্রহ’ এ (চৈতালী দত্ত সম্পাদিত ও ভাষান্তরিত: নবপত্র প্রকাশন: কলকাতা, ২০০০) দেখা যায় চানক্য বলছেন: অসার এ সংসারে চারটি মাত্র সারবস্তু আছে। এগুলো হচ্ছে: কাশীবাস, সাধুজনের সঙ্গলাভ, গঙ্গা জল ও শিব পূজা। যে চারটি সারবস্তুর কথা চানক্য উল্লেখ করেছেন তার মধ্যে একটি স্বয়ং শিব। ‘গঙ্গা’ শিবের স্ত্রী। কাশী (বিশ্বনাথ মন্দির) শিবের লীলাভূমি। আর ধ্যানী শিব সাধু না হয়ে পারেন না। এই গেলো প্রাচীন কালের কথা। পরবর্তীকালে কি হিন্দুধর্মে শিবের অবস্থান পরিবর্তিত হয়েছে? বলা বাহুল্য বহু উত্থান পতনের পরে আজকের দিনেও শিব ও তাঁর পরিবারভুক্ত দেব-দেবীই হিন্দুর প্রধান উপাস্য।

এবারে আসা যাক ভগবান গৌতম বুদ্ধের প্রসঙ্গে। আমরা জানি প্রবল প্রতাপশালী বৌদ্ধধর্ম আজ ভারতে প্রায় বিলুপ্ত। এই বিলুপ্তি কিভাবে সম্ভব হল? বৌদ্ধদের দেশত্যাগের মাধ্যমে? নিশ্চয় নয়। হিন্দুরা বলে তারা বৌদ্ধধর্মকে আত্মসাৎ করেছে। কিন্তু প্রশ্ন: হিন্দুরা বৌদ্ধধর্মকে আত্মসাৎ করেছে, না বৌদ্ধধর্মকে (মহাযানী বৌদ্ধ) ঘিরেই হিন্দুধর্মের (ব্রাহ্মণ্য-ধর্ম নয়) গোড়া পত্তন হয়েছে? হিন্দুর মানস গঠনে বৌদ্ধধর্মের অবদানের বিষয়টি আলোচনা করলেই তা পরিষ্কার হবে।The Dharmachakra Pravartana Buddha a statue of the Buddha from Sarnath Uttar Pradesh India শিব ও বুদ্ধ - ড. আর এম দেবনাথ

শুরু করা যাক বর্তমান ভারত রাষ্ট্রের উদাহরণ দিয়ে। দেখা যায় অশোকের সিংহাসনকে ভারত জাতীয় প্রতীক করেছে। বুদ্ধের ধর্মচক্র প্রবর্তনের চক্রকে জাতীয় পতাকায় স্থান দেওয়া হয়েছে। ভারতের রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যবহৃত হয় ‘সত্যমেব জয়তে’। এটিও কি বৌদ্ধধর্মের অনুসৃতি নয়? মহাত্মা গান্ধী কর্তৃক অনুসরিত আধুনিক কালের ‘অহিংসা’ নীতিটি কার ? বলা বাহুল্য অহিংসার বাণী গৌতম বুদ্ধেরই অন্যতম প্রধান বাণী। বর্তমান কালের রামকৃষ্ণ মিশনের ‘মঠ’ শব্দ, সন্ন্যাসীদের গেরুয়া পোষাক ও মাথা ন্যাড়া করার। রীতিগুলো কার স্মৃতি বহন করে? বলা বাহুল্য এসবই বৌদ্ধস্মৃতি বহন করে। এই প্রেক্ষাপটে বুদ্ধ ও বৌদ্ধধর্ম সম্বন্ধে স্বামী বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ ও প্রমথ চৌধুরীর কী বলেন তা নিচে প্রদত্ত হল:

১. স্বামী বিবেকানন্দ: হিন্দুর মন গঠনে বুদ্ধ ও বৌদ্ধধর্মের অবদান প্রসঙ্গে স্বামী বিবেকানন্দের (নরেন্দ্র নাথ দত্ত) কয়েকটি বক্তব্য এখানে উল্লেখ করা যায়। স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন: পৃথিবীতে যত মানুষ জন্ম গ্রহণ করেছেন তাদের মধ্যে বুদ্ধই শ্রেষ্ঠ (বাণী ও রচনা সংকলন : রামকৃষ্ণ মঠ: ঢাকা: ১৩৯৯)। তাঁর মতে বুদ্ধ ছিলেন কর্মপরায়ণ ও জ্ঞানী। বৌদ্ধরাই ভারতে প্রতিমা পূজা ও পৌরোহিত্য প্রথার সৃষ্টি করে। জগন্নাথ দেবের মন্দির একটি বৌদ্ধ মন্দির ছিল। পরে এটি হিন্দু মন্দির হয়েছে। বিবেকানন্দের মতে বৌদ্ধধর্ম ও বেদান্তের সারাংশে কোনো পার্থক্য নেই। বুদ্ধ অন্যতম বেদান্তবাদী সন্ন্যাসী। বিবেকানন্দ বলছেন। পশু বলী বন্ধ, বংশগত জাতিভেদ বিলোপ ও পুরোহিতদের আধিপত্য বিনষ্ট করে বুদ্ধ বৈদিক ধর্মের সংস্কার করতে চেয়েছিলেন।

স্বামী বিবেকানন্দ [ Swami Vivekananda ]
স্বামী বিবেকানন্দ [ Swami Vivekananda ]

২. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর: রবীন্দ্রনাথ তাঁর গ্রন্থে (বুদ্ধদেব: বিশ্বভারতী: ১৪০০) গৌতম বুদ্ধকে সর্বশ্রেষ্ঠ মানব হিসেবে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। প্রশংসার অনেক কারণ আছে। রবীন্দ্রনাথের মতে :

Rabindranath Tagore রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 3 শিব ও বুদ্ধ - ড. আর এম দেবনাথ

ক. শঙ্করাচার্যের ‘অদ্বৈতবাদ বৌদ্ধ দর্শনের সহায়তায় পরিপুষ্টি লাভ করেছে। এই ‘অদ্বৈতবাদ’ ধারণাটি হচ্ছে একের মধ্যে বহু বহুর মধ্যে এক’।

খ. যে বৈষ্ণব ধর্ম একসময়ে বাংলায় গণজাগরণের সৃষ্টি করেছিল তাও বৌদ্ধধর্ম দ্বারা সঞ্জীবিত। এই বৈষ্ণর বা প্রেমের ধারা দ্রাবিড় সভ্যতার অবদান। গৌতম বুদ্ধ এই ধারণাকে পরিশীলিত করেন। এই প্রাচীন প্রেমের ধারাই শ্রীচৈতন্যের মাধ্যমে বৈষ্ণবধর্মে রূপান্তরিত হয়। বৈষ্ণবদের রথযাত্রা (জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা) উৎসবটিও বৌদ্ধ উৎসব। তাই বৌদ্ধধর্ম পতনের পর বৌদ্ধ মন্দিরই বৈষ্ণব দেবতার মন্দিরে পরিণত হয়। সাথে সাথে বুদ্ধের পদচিহ্নও বিষ্ণুর পদচিহ্নে রূপান্তরিত হয়।

গ. ভক্তিবাদের সূত্রেই ‘অবতারবাদের’ সৃষ্টি। বেদের আমলে আর্যদের দেবতারা ছিলেন স্বর্গবাসী। এই দেবতাদেরকে ভগবান বুদ্ধ অবতারবাদের মাধ্যমে মানুষের রূপে মর্ত্যলোকে নামিয়ে আনেন। তার অর্থ ভক্তিকে নরদেহে আশ্রয় দেওয়ার রীতিও বৌদ্ধধর্মের দান। মানব গুরুকে দৈবশক্তি দিয়ে পূজা করার পদ্ধতিটিও বৌদ্ধধর্ম থেকে নেওয়া। বৈষ্ণব ধর্মের গুরুবাদ বৌদ্ধধর্মের আর একটি অবদান।

ঘ. বৌদ্ধ ধর্মের তিনটি স্তম্ভ হচ্ছে ‘বুদ্ধ, ধর্ম ও সংঘ’। হিন্দুরা এর স্থলে দাঁড় করায় : ভক্তি, জ্ঞান ও কর্মকে। বুদ্ধ হচ্ছে ভক্তি, ধর্ম হচ্ছে জ্ঞান এবং সংঘ হচ্ছে কর্ম। এই ভক্তি, জ্ঞান ও কর্ম গীতায় ভক্তিযোগ, জ্ঞানযোগ ও কর্মযোগ হিসেবে স্থাপিত হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। রবীন্দ্রনাথের মতে অবশ্য ভগবান বুদ্ধ জ্ঞান ও প্রেমের ধারার মিলন ঘটিয়েছেন।

ঙ. ‘সকল প্রাণী সুখী হোক’ এই বাণীর মাধ্যমে বুদ্ধ প্রকৃতপক্ষে মানুষকে বড় করেছেন। তিনি মানুষকে বসিয়েছেন দেবতার স্কুলে। বলা বাহুল্য সাথে সাথে তিনি পশুকে করেছেন। আদরনীয় এবং পশু হত্যা করেছেন নিষিদ্ধ।

চ. আর্যভারত ও হিন্দু ভারতের মধ্যবর্তী যুগ হচ্ছে বৌদ্ধযুগ। আর্যরা যখন ভারতে আসে তখন ভূমিপুত্র ও দ্রাবিড় সভ্যতার জনগোষ্ঠীর সাথে প্রবল সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষ শেষে বৌদ্ধযুগে একটি মিলন ও মিশ্রনের ব্যবস্থা হয়। রবীন্দ্রনাথ মনে করেন আর্যরা যা চেয়েছিল তা তারা করতে পারে নি। আর্যদের শেষ পর্যন্ত দ্রাবিড় সভ্যতা ও বৌদ্ধদের সাথে আপোষ রফা করতে হয়। এতেই হিন্দু ভারতের যাত্রা শুরু হয়। এই যাত্রা শুরুর কালটাই পৌরাণিক কাল। পুরাণগুলোর সাথে তাই মহাযানী বৌদ্ধের মিল খুঁজে পাওয়া যায়। বৌদ্ধরা ছিল দুইভাগে বিভক্ত : মহাযানী ও হীনযানী। রবীন্দ্রনাথের মতে মহাযানী বৌদ্ধে ছিল হৃদয় আর হীনযানীতে ছিল তত্ত্বজ্ঞান। তিনি মনে করেন হৃদয়ের জোয়ারই শেষ পর্যন্ত জয়লাভ করে।

প্রমথ চৌধুরী [ Pramathanath Chaudhuri ]
প্রমথ চৌধুরী [ Pramathanath Chaudhuri ]
৩. প্রমথ চৌধুরী : বৌদ্ধধর্মের সাথে হিন্দুধর্মের সম্পর্ক কী এ বিষয়ে প্রমথ চৌধুরী আরও খোলাখুলিভাবে বলেছেন (প্রবন্ধ : প্রত্নতত্ত্বের পারস্য উপন্যাস: প্রবন্ধ সংগ্রহ: বিশ্বভারতী : (১৯৯৩)। তাঁর মতে : যাকে আমরা হিন্দু সভ্যতা বলি সেটি একটি অর্বাচীন পদার্থ। বৌদ্ধ সভ্যতার পাকা বুনিয়াদের ওপর তা প্রতিষ্ঠিত। ভারতবর্ষের ইতিহাসের সর্বনিম্নস্তরে যা পাওয়া যায়, সে হচ্ছে বৌদ্ধধর্ম। …. তাই প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে, পাটলিপুত্রই (বর্তমান পাটনা) হচ্ছে আমাদের ইতিহাসের কেন্দ্রস্থল – একাধারে জন্মভূমি এবং পীঠস্থান।

আলোচনার এই পর্যায়ে মহাদেব ও বুদ্ধের তুলনামূলক একটি বিচার করা দরকার। কারণ দেখা যায় শিব ও বুদ্ধের মধ্যে প্রচুর মিল। এঁরা কখনও সমাস্ত রালভাবে পূজিত হচ্ছেন, আবার কখনও একজন আর একজনের জন্য জায়গা ছেড়ে দিচ্ছেন। সমান্তরাল পূজার কথা উল্লেখ করেছেন দীনেশ চন্দ্র সেন। তিনি বলেছেন : বুদ্ধ ও শিবের মূর্তি ৮ম ও ৯ম শতাব্দীতে জনগণের সর্বশ্রেষ্ঠ উপাস্য ছিল। এদিকে জায়গা বদলের ক্ষেত্রে লক্ষ করা যায় শিব অথবা বুদ্ধের জায়গা কখনও আর্যদেবতা ব্রহ্মা অথবা বিষ্ণু দখল করতে পারেন নি।

আমরা জানি শিব অথবা দ্রাবিড় সভ্যতার সাথেই আর্যদের তুমুল সংঘাত ঘটে। এই সংঘাত-সংঘর্ষের পরিণামই গৌতম বুদ্ধের বৌদ্ধধর্ম। এই ধর্মটির প্রতিপত্তিকালে শিবের স্থান অনেকাংশে বুদ্ধ অধিকার করে নেন। কারণটি বোধগম্য। শিব অশরীরী দেবতা। আর গৌতম বুদ্ধ রক্ত মাংসের মানুষ হয়েও দেবতুল্য মহাপুরুষ। দু’য়ের মধ্যে পার্থক্যের চেয়ে মিলই বেশি। মহাদেব সাধারণ মানুষের দেবতা ও তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। তিনি যজ্ঞ ও বেদের বিপক্ষ শক্তি। কৃষি সভ্যতা, মাতৃতান্ত্রিক সমাজ, মূর্তি পূজারি, নিরামিশাষী মানুষ ও সমান সমাজের দেবতা হচ্ছেন মহাদেব বা শিব।

অপরদিকে ভগবান গৌতম বুদ্ধও যজ্ঞ বিরোধী এবং সমান সমাজে বিশ্বাসী। তিনি বেদের উঁচু-নিচু সমাজের ঘোরতর বিরোধী। জাতপাতবিহীন সমতল সমাজের পূজারি গৌতম বুদ্ধ। তাঁর কাছে মানুষই দেবতা। স্রষ্টার অস্তিত্ব সম্বন্ধে তিনি নির্বিকার। তাই শিব ও বুদ্ধের মধ্যে পারস্পরিক জায়গা বদল খুবই স্বাভাবিক।

ওপরের আলোচনা থেকে দেখা যায় যে, বৌদ্ধকালে ভগবান গৌতম বুদ্ধ শিবের স্থলাভিষিক্ত হন। শিব আড়ালে চলে যান। কিন্তু নির্বাসিত হন নি। এই অবস্থা চিরস্থায়ী হয়নি। বৌদ্ধধর্মের অবক্ষয়কালে সূচিত হয় দীর্ঘস্থায়ী পৌরাণিক কাল। প্রসঙ্গত বৌদ্ধধর্মের পতনের কারণগুলো চিহ্নিত করা দরকার।

সংক্ষেপে কারণগুলো হচ্ছে:

ক. হীনযান-মহাযান মতভেদ

খ. ইসলামের আগমন

গ. সংঘের বিলুপ্তি

ঘ. ভজন পূজনের অভাব

ঙ. তন্ত্রের উত্থান

চ. ভিক্ষু-ভিক্ষুনী সমস্যা

ছ. শংকরের বৌদ্ধ বিরোধী অভিযান

জ. নিরীশ্বরবাদ ইত্যাদি

বলা বাহুল্য এই প্রেক্ষাপটেই ‘আর্যধর্ম’ বা ‘ব্রাহ্মণ্য ধর্ম’ পুনরুত্থানের প্রচেষ্টা চালায়। কিন্তু সফল হয় নি। অবশেষে সমঝোতা করতে হয় শৈবধর্ম (প্রাক-আর্য) ও বৌদ্ধধর্মের (আর্য-পরবর্তী) সাথে। এ পর্যায়ে মহাদেব পুনরায় বুদ্ধের স্থান দখল করে নেন। বৌদ্ধধর্মটি পেছনে পড়ে যায়। হিন্দুধর্মের ভিত্তি স্থাপিত হয়।

পৌরাণিক আমলে ধীরে ধীরে মহাদেব তাঁর পরিবার পরিজন নিয়ে হিন্দুর মনে বদ্ধমূল হয়ে বসেন। তিনি হন ‘কমপ্লিট গড’। তাঁর সাথে যুক্ত হয় পার্বতী, উমা, গঙ্গা, দুর্গা ও কালী। এঁরা কল্পিত হন শিবের স্ত্রী হিসেবে। সাথে যুক্ত হয় গণেশ ও কার্তিক। এঁরা শিবের পুত্র। কন্যাদের মধ্যে রয়েছেন মনসা ও লক্ষ্মী ইত্যাদি। শুধু এরাই নন শিবের পরিবারের সাথে পরবর্তীকালে যুক্ত হয় আরও অসংখ্য লোকায়ত দেব-দেবী। অবশ্য পাশাপাশি গড়ে ওঠে আর এক ধারা। এই ধারা বিষ্ণুর ধারা।

আমরা জানি আর্যদের দেবতা বিষ্ণুকে ভূমিপুত্ররা গ্রহণ করে নি। গত্যন্তর না দেখে তারা বৌদ্ধদের ‘অবতারবাদের’ আশ্রয় নেয়। অবতারবাদের মাধ্যমে সৃষ্ট হয় ‘কৃষ্ণ ও রাম’। আমরা জানি রাম ও কৃষ্ণ উভয়ই বিষ্ণুর অবতার। তাদের ধারাই বর্তমানকালের বৈষ্ণব ধারা। নীরদ চৌধুরীর মতে, এ ধারা উত্তর ভারতে শিবের প্রতিদ্বন্দ্বী ধারা। মঙ্গলের ঈশ্বর হিসেবে শিব অবশ্য সেখানেও পূজিত। কিন্তু দক্ষিণ ভারতে শিবই সর্বশ্রেষ্ঠ দেবতা বা ঈশ্বর।

আজকের দিনে সর্বশেষ অবস্থা কী? নানা সামাজিক-রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ফল হিসেবে দেখা যাচ্ছে হিন্দুর প্রধান এ দুটো ধারা অর্থাৎ শৈব ও বৈষ্ণব ধারার মধ্যে পার্থক্য ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে। এর অনুকরণে অন্যান্য অপ্রধান ধারা অর্থাৎ শাক্ত, গাণপত্য ও সৌর ইত্যাদি ধারার প্রভাবও হ্রাস পাচ্ছে। ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছে বৃহত্তর ঐতিহ্য যেখানে সকল হিন্দু মিলেমিশে একাকার।

সুত্র : সিন্ধু থেকে হিন্দু [ ড: আর এম দেবনাথ]

আরও পড়ুন:

Leave a Comment