আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় জননাশৌচ ও মরণাশৌচ
জননাশৌচ ও মরণাশৌচ
জননাশৌচ ও মরণাশৌচ
শৌচ মানে শুচিতা বা পবিত্রতা। ‘অশৌচ’ মানে শুচিতা বা পবিত্রতার অভাব। অশৌচ দু-প্রকার জননাশৌচ ও মরণাশৌচ। পুরাকালে এখনকার হাসপাতাল ব্যবস্থা ছিল না। তাই বাড়িতেই প্রসূতির সন্তান প্রসবের ব্যবস্থা করা হত। স্বভাবতই বাড়ি এবং বিশেষ করে যে ঘরে প্রসূতি থাকত, তা নোংরা হয়ে যেত। এতে করে পরিবেশে অশুচি দেখা দিত।
একেই বলে জনানশৌচ— জন্মের সাথে যার যোগ। আমরা জানি এই মায়াময় পৃথিবীতে সকল প্রাণী ও বস্তুর প্রতি আমাদের স্বাভাবিক মায়া-মমতা জন্মে থাকে। মনে হয় সকলেই আমার আপন। পরিবার থেকে কেউ মারা গেলে মনে কষ্ট হয়। সর্বোপরি একটি মানুষ যার সঙ্গে আমার আত্মার যোগ রয়েছে তাকে হারালে, কতটা বেদনা উপস্থিত হয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
সুতরাং যাঁর সঙ্গে এতকাল বসবাস করছি, যার সঙ্গে আত্মার সম্বন্ধ আছে, তাকে হারালে, অবশ্যই দুঃখ হয়। হিন্দু ধর্মের একটি বিশ্বাস হচ্ছে এই যে, মৃত্যুর মধ্য দিয়ে জীবের আত্মা দেহকে ছেড়ে যায়। সেই আত্মা তখন সূক্ষ্ম দেহ ধারণ করে প্রথমে প্রেতলোকে অবস্থান করে। তার সন্তুষ্টি বিধান করার জন্য যারা তার আপনজন বেঁচে থাকে তারা যত্নবান হয়।
পরিবারের কেউ মারা গেলে, মন শোকে আকুল হয়। তখন ধর্মীয় ও সামাজিক কাজকর্ম সুষ্ঠুভাবে করার মত মনের অবস্থা থাকে না। পরিবারের কারও মৃত্যুর পর এই যে দেহমনের অশুচি অবস্থা, একেই বলে মরণাশৌচ। মৃত ব্যক্তির আত্মা যাতে আমাদের কর্মে সন্তুষ্ট হয়ে তৃপ্ত মনে দেবলোকে যেতে পারে সেই জন্যই অশৌচ অবস্থা। ব্রাহ্মণ দশ দিন, ক্ষত্রিয় বার দিন, বৈশ্য পনের দিন এবং শূদ্র এক মাস অর্থাৎ ত্রিশ দিন অশৌচ পালন করবেন।
যদি সূর্যোদয়ের পূর্বে মৃত্যু হয় তাহলে পূর্বদিন ধরে অশৌচ গণনার দিন ধার্য হবে। যতদিন অশৌচ থাকবে ততদিন পর্যন্ত প্রত্যহ প্রেতের উদ্দেশ্যে নীর ও ক্ষীর (জল ও দুধ) এবং একটি করে পিণ্ড দান করতে হয়। যিনি মুখাগ্নি করেন, তিনি হন পূরক পিণ্ডদানের অধিকারী। যদি কোন কারণে পূরক পিণ্ডবাদ পড়ে, তাহলে শেষ দিন বাদ পড়া সকল পিণ্ড একসাথে দান করতে হবে।
মৃত্যু সংবাদ তৎক্ষণাৎ না শুনে যদি কয়েকদিন পরে শুনা যায় তাহলে যেদিন শুনবে সেদিন হতে ত্রিরাত্র অশৌচ পালন করবে। যদি এক বছর পরে অশৌচের কথা শোনা যায়, তাহলে সদ্য অশৌচ হবে। কিন্তু পিতা-মাতা বা স্বামীর মৃত্যু সংবাদ যদি এক বছর পরও শোনা যায় তাহলেও ত্রিরাত্র অশৌচ হবে। দুই বছরের কম বালক-বালিকার মৃত্যু হলে দাহ না করে মাটিতে পুঁতে রাখতে হয়। তাদের প্রেততর্পণও করতে হয় না ।
সারাংশ
অশৌচ মানে অশুচিতা বা অপবিত্রতা। অশৌচ দু-প্রকার। জননাশৌচ ও মরণাশৌচ। মৃত ব্যক্তির সূক্ষ্ম আত্মার সন্তুষ্টি বিধানের জন্য এবং তার প্রতি শ্রদ্ধাবশত মরণাশৌচ পালন করতে হয়। কতদিন অশৌচ পালন করতে হবে, তার সময়সীমা ঋষিরা নির্ধারণ করে দিয়েছেন।
আরও দেখুন :