জন্মান্তরবাদ ধর্মদর্শন

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় জন্মান্তরবাদ ধর্মদর্শন

জন্মান্তরবাদ ধর্মদর্শন

 

জন্মান্তরবাদ ধর্মদর্শন

 

জন্মান্তরবাদ ধর্মদর্শন

মানুষ যে কর্ম করে সে কর্মের ফল একাধিক জন্মে ভোগ করে। এ জন্মের কর্মের ফল এ জন্মে ভোগ করা না হলে পরবর্তী কোন জন্মে তা ভোগ করতে হয়। অন্য জন্মকে বলে জন্মান্তর। জন্মান্তর সম্বন্ধে যে তত্ত্ব তাকে জন্মান্তরবাদ বলে। দেহ নশ্বর, কিন্তু আত্মা অবিনশ্বর। মৃত্যুতে মানুষের দেহ নষ্ট হয়, কিন্তু আত্মার ধ্বংস নেই।

কর্মের ফল অনুসারে আত্মা নতুন দেহ আশ্রয় করে পুনরায় জন্মগ্রহণ করে, এ জন্মগ্রহণই হল জন্মান্তর। এ প্রসঙ্গে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন—

“বহুবার জন্মিয়াছি তুমি আর আমি।

আমি জ্ঞাত আছি পাৰ্থ ভুলিয়াছ তুমি।’ (গীতা, ৪/৫)

যে পর্যন্ত কর্মফল ভোগ বাকি থাকবে সে পর্যন্ত বার বার জন্মগ্রহণ করতে হবে। এ কথার মধ্যে দিয়ে শ্রীকৃষ্ণ যে অর্জুনের সখা এবং তার রথের সারথি এ সত্য অতিক্রম করে আরও একটি পরম সত্য প্রকাশিত হয়েছে তা হল, তিনি সর্বজ্ঞ, পরমেশ্বর। তিনি শাশ্বত, অব্যয়, পরমাত্মার প্রতীক ।

আবার যখন বলা হল অর্জুনেরও বহুবার জন্ম হয়েছে, এ থেকে বোঝা যায় অর্জুনের মধ্যেও পরমাত্মার ন্যায় কোন শাশ্বত বস্তু রয়েছে যা বহুবার জন্ম-মৃত্যুর মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়েও নষ্ট হয়ে যায়নি। শাস্ত্রের ভাষায় জীবদেহের ঐ শাশ্বত বস্তুটি হল জীবাত্মা, সংক্ষেপে আত্মা। জীবাত্মা পরমাত্মার অংশ বিশেষ ।

দেহ ও আত্মার মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ রয়েছে। দেহকে আশ্রয় করে আত্মার অভিযাত্রা এবং আত্মাকে লাভ করে দেহ সজীব হয়। দেহহীন আত্মার কোন মূল্য নেই। আবার আত্মাহীন দেহ জড়। দেহের ভেতর যে আত্মার অবস্থান রয়েছে তা উপলব্ধি করা কঠিন ব্যাপার। আত্মা যে দেহকে আশ্রয় করে সেটি নশ্বর। ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ, ব্যোম- এই পাঁচটি উপাদানে গড়া দেহ।

 

গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন
গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

যিনি জীবদেহ ধারণ করে এসেছেন তার দেহনাশ নিশ্চিত হয়ে রয়েছে। ঐ জীবাত্মা এক দেহ ত্যাগ করে অন্য নতুন দেহে চলে যায়। মৃত ব্যক্তির জন্মও সুনিশ্চিত। জীবাত্মা পুরাতন দেহ ত্যাগ করে নতুন দেহ ধারণ করে। এ তত্ত্বই জন্মান্তরবাদ ।
কামনা-বাসনাযুক্ত প্রত্যেক কর্মই সকাম কর্ম। মৃত্যুর পর আত্মাকে সমস্ত সকাম কর্মের ফলাফল ভোগ করতে হয়।

জীবাত্মার পক্ষে মৃত্যুর অর্থ দেহত্যাগ। জীবাত্মা কেনই বা দেহ ত্যাগ করে? গীতায় এ সম্বন্ধে বলা হয়েছে, দেহ ত্যাগ ঘটনাটি একটি সহজ কাজ। যথা— একই দেহে বাল্য, কৈশোর, যৌবন, বার্ধক্য আসে, তেমনি আত্মাও জীর্ণ দেহ ত্যাগ করে চলে যায়। দেখা যায় লোকে পুরাতন বস্ত্র ত্যাগ করে নতুন বস্ত্র পরিধান করে। তাই জীবাত্মাও জীর্ণ দেহ ত্যাগ করে নতুন দেহ গ্রহণ করে ।

জন্মান্তরবাদের সঙ্গে কর্মবাদ অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। আত্মার অবিনাশিতাবাদ ও জন্মান্তরবাদের ন্যায় কর্মবাদও হিন্দু ধর্মের ভিত্তিপ্রস্তর স্বরূপ। কর্মবাদের মূল কথা হল, বিশ্বজগৎ স্রষ্টার বড় কর্মক্ষেত্র। এখানে জীব ভাবনা, বাসনা ও চেষ্টার দ্বারা বিভিন্ন কার্য করে যাচ্ছেন। প্রত্যেকটি কর্মে রয়েছে পৃথক পৃথক কর্মফল। হিন্দু ধর্মের মতে কর্ম করলেই কর্মফল উৎপন্ন হবে।

আর কর্মকর্তাকে তা ভোগ করতে হবে। এই কর্মফল ভোগ শেষ না হওয়া পর্যন্ত মানবের মুক্তি হবে না। নিষ্কামভাবে কর্ম করলে সে কর্মের যে ফল উৎপন্ন হবে তা কর্মকর্তাকে ভোগ করতে হবে না। সুতরাং নিষ্কাম কর্মের অনুশীলন করাই সঙ্গত কাজ। নিষ্কাম কর্ম করে জীব মুক্তি লাভ করতে পারে।

 

জন্মান্তরবাদ ধর্মদর্শন

 

সারাংশ

যতদিন কর্মফল ভোগ শেষ না হয়, ততদিন আত্মার জন্মান্তর হবেই। জীবাত্মা পুরাতন দেহ ত্যাগ করে নতুন দেহ ধারণ করে, হিন্দু ধর্মের এ তত্ত্বকেই বলে জন্মান্তরবাদ ।

আরও দেখুন :

Leave a Comment