আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় দশবিধ সংস্কার শেষ পাঁচটি
Table of Contents
দশবিধ সংস্কার শেষ পাঁচটি
দশবিধ সংস্কার
দশবিধ সংস্কারের শেষ পাঁচটি সংস্কার অর্থাৎ চূড়াকরণ, উপনয়ন, সমাবর্তন ও বিবাহ সম্পর্কে আলোচনা করা হচ্ছে :
অন্নপ্রাশন :
পুত্র সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে ষষ্ঠ বা অষ্টম মাসে এবং কন্যা সন্তানের জন্ম থেকে পঞ্চম বা সপ্তম মাসে প্রথম ভোজন করানোর জন্য যে মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান করা হয় তাকে অন্নপ্রাশন বলে ।
চূড়াকরণ :
গর্ভাবস্থায় সন্তানের মস্তকে যে কেশ উৎপন্ন হয়, তা মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানসহ মুণ্ডনের নাম চূড়াকরণ ।
উপনয়ন :
উপনয়ন সংস্কারে বিদ্যা শিক্ষার জন্য শিক্ষার্থীকে প্রথম গুরুর কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। ‘উপনয়ন’ শব্দটির মানেই নিকটে নিয়ে যাওয়া। প্রচলিত একটি অর্থে উপনয়ন বলতে বোঝায় যজ্ঞোপবীত বা পৈতা ধারণ।
সমাবর্তন :
অধ্যয়ন শেষে গুরু কর্তৃক শিষ্যকে গৃহে ফেরার অনুমতি প্রদান উৎসবকে সমাবর্তন বলে। উপনয়ন শেষে গুরুগৃহে বাস করাই ছিল রীতি। সেখানে পড়াশুনা শেষ করে গুরুর অনুমতি নিয়ে গৃহে প্রত্যাগমন করতে হত। বর্তমানকালে সাধারণত গুরুগৃহে থেকে বিদ্যাশিক্ষার প্রচলন নেই। সে কারণে এ সংস্কারটি এখন পালিত হয় না। তবে বর্তমানে ‘সমাবর্তন’ নামটি আছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদপত্র বিতরণ উৎসব এখন সমাবর্তন উৎসব নামে উদযাপিত হয়। যারা স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে তাদের উপাধি পত্র প্রদান উৎসবই পূর্বকালের গুরুগৃহ ত্যাগের উৎসব বলে মনে করা যেতে পারে।
বিবাহ :
যৌবন অবস্থার সংস্কার বিবাহ। বিবাহের দ্বারা পুরুষ সন্তানের পিতা হন। নারী হন মাতা। বিবাহের মাধ্যমে পিতা-মাতা, পুত্র-কন্যা প্রভৃতি নিয়ে গড়ে ওঠে একটি পরিবার। পরিবারে সকলে মিলে-মিশে সুখ-দুঃখ ভাগ ও ভোগ করে জীবন-যাপন করে। বিবাহে যেমন কতকগুলো শাস্ত্রীয় বিধি-বিধান পালিত হয়, তেমনি পালিত হয় কতকগুলো লৌকিক ও স্থানীয় স্ত্রী-আচার ।
বিবাহে উচ্চারণ করা হয় :
যদেতৎ হৃদয়ং তব তদস্তু হৃদয়ং মম । যদিদং হৃদয়ং মম, তদস্তু হৃদয়ং তবা অর্থাৎ তোমার এ হৃদয় আমার হোক আমার এ হৃদয় হোক তোমার । এ মন্ত্রের মধ্য দিয়ে স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে গভীর ঐক্য গড়ে ওঠে। মনুসংহিতায় সেকালের অবস্থা অনুসারে ৮ রকমের বিবাহ-পদ্ধতির বর্ণনা আছে। যথা—ব্রাহ্ম, দৈব, আর্য, প্রজাপাত্য, আসুর, গান্ধর্ব, রাক্ষস ও পৈশাচ ।
কন্যাকে বিশেষ বস্ত্র দ্বারা আচ্ছাদন করে স্বর্ণঅলংকার ইত্যাদি দ্বারা সজ্জিত করে বিদ্বান ও সদাচার সম্পন্ন বরকে স্বয়ং আমন্ত্রণ করে যে কন্যা দান করা হয় তাকে ব্রাহ্মবিবাহ বলে। “তোমরা উভয়ে সুখে গার্হস্থ্য ধর্মের আচরণ কর”-এই আশীর্বাদ করে যথাবিধি অলংকার ইত্যাদি দ্বারা অর্চনাপূর্বক বরকে যে কন্যা দান করা হয় তাকে প্রাজাপত্য বিবাহ বলে।
বিবাহের নানা প্রকার পদ্ধতি সেকালের সামাজিক প্রথাকেই স্মরণ করিয়ে দেয়। বিবাহ-পদ্ধতিসমূহের মধ্যে ব্রাহ্ম বিবাহ পদ্ধতিটিই শ্রেষ্ঠ।
সারাংশ
হিন্দু ধর্মের দশবিধ সংস্কারের শেষ পাঁচটি সংস্কার হচ্ছে চূড়াকরণ, উপনয়ন, সমাবর্তন ও বিবাহ। আট প্রকার বিবাহের মধ্যে ব্রাহ্ম বিবাহই শ্রেষ্ঠ।
আরও দেখুন :