আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় বিষ্ণু দেব
Table of Contents
বিষ্ণু দেব
বিষ্ণুর পরিচয়
ঈশ্বর যে দেবতা রূপে সৃষ্টিকে পালন করেন, তাঁর নাম বিষ্ণু। বিশ্বকে প্রকাশ করে বিরাজ করেন বলে তাঁর নাম বিষ্ণু। বেদে বিষ্ণু দেবতার উল্লেখ আছে। বেদে বলা হয়েছে, বিষ্ণু পার্থিব লোক পরিমাপ করেছেন। বিশাল তার শরীর, তিনি চিরতরুণ। পুরাণে বলা হয়েছে, বিষ্ণু সৃষ্টির পালক। ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব পৌরাণিক দেবতাদের মধ্যে প্রধান।
এ তিনজন প্রধান দেবতাকে একত্র “ত্রিমূর্তি’ বা ‘ত্রিনাথ’ বলা হয় সুতরাং বিষ্ণু এই ত্রিমূর্তির অন্যতম। বিষ্ণুর অনেক নাম। যেমন- নারায়ণ, কৃষ্ণ, গোবিন্দ, ত্রিবিক্রম ইত্যাদি।
বিষ্ণুর রূপ
পুরাণে বিষ্ণুর রূপ সম্পর্কে বলা হয়েছে, বিষ্ণুর গায়ের রং চাঁদের আলোর মত। তাঁর চারটি হাত। চার হাতে চারটি দ্রব্য থাকে। ওপরের দিককার বাঁ হাতে থাকে বিষ্ণুর শঙ্খ। এই শঙ্খকে ‘পাঞ্চজন্য’ বলা হয়। ওপরের দিকের ডান হাতে থাকে চক্র। বিষ্ণুর এই চক্রকে বলা হয় ‘সুদর্শন’। তাঁর নিচের দিকে বাঁ হাতে গদা এবং ডান হাতে পদ্ম থাকে। গরুড় পাখি বিষ্ণুর বাহন। পুরাণে বলা হয়েছে বিষ্ণু বৈকুণ্ঠে থাকেন।
বিষ্ণু পূজার সময়
সকল দেবতার পূজা করার সময় যে পঞ্চ দেবতার পূজা করা হয় তাঁরা হলেন- শিব, বিষ্ণু, গণেশ, সূর্য ও জয়দুর্গা। সুতরাং বিষ্ণু পঞ্চ দেবতার অন্যতম। সকল দেবতার পূজা করার সময় বিষ্ণুর পূজা করা হয় বলে বিষ্ণু পূজার নির্দিষ্ট দিন নেই। যে-কোন দিন বিষ্ণুর পূজা করা যায়।
বিষ্ণুর প্রণামমন্ত্র
নমো ব্রহ্মণ্যদেবার গোব্রাহ্মণ হিতায় চ।
জগদ্ধিতায় কৃষ্ণায় গোবিন্দায় নমো নমঃ।।

সরলার্থ
ব্রহ্মণ্যদেবকে নমস্কার। গো-ব্রাহ্মণের হিতকারী এবং জগতের মঙ্গলকারী কৃষ্ণকে— গোবিন্দকে নমস্কার।
বিষ্ণুর মাহাত্ম্য
বিষ্ণু দেবতাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করেছেন। পুরাণ পাঠের সময় আমরা দেখি যখনই কোন দেবতা কোন বিপদে পড়েন, তখন তিনি শ্রীবিষ্ণুর শরণ নেন। বিষ্ণু বিভিন্ন অবতাররূপে অনেকবার পৃথিবীতে এসে দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন করে ধর্ম স্থাপন করেছেন। পুরাণে তাঁর নানা অবতারের নাম বলা হয়েছে। যেমন- মৎস্য অবতার, কূর্ম অবতার, নৃসিংহ অবতার, পরশুরাম অবতার, রাম অবতার ইত্যাদি।
বিষ্ণু মধু, কৈটভ, হিরণ্যকশিপু প্রভৃতি দৈত্যদের বধ করেছেন। কৃষ্ণরূপে তাঁর কৃতিত্ব অত্যুজ্জ্বল হয়ে রয়েছে। তিনি কৃষ্ণরূপে কংস ও শিশুপাল প্রভৃতি অত্যাচারী রাজাকে বধ করেছেন। কুরু- পাণ্ডবের যুদ্ধের সময় ধর্মের পক্ষে ও পাণ্ডবদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। ‘শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় শ্রীকৃষ্ণের উপদেশ সংকলিত হয়েছে। গীতা এ-কালেও নিত্যপাঠ্য ধর্মগ্রন্থ।
এছাড়া বিষ্ণু পূরাণ, ভাগবত পুরাণ প্রভৃতি পুরাণেও বিষ্ণুর বা কৃষ্ণের মাহাত্ম্য বর্ণনা করা হয়েছে। বিষ্ণুর অনেক মূর্তি নির্মাণ করে সারা ভারতবর্ষে যুগ যুগ ধরে পূজা করা হচ্ছে। সারা পৃথিবীতে বিষ্ণু বা কৃষ্ণের অনেক ভক্ত রয়েছেন। বিষ্ণুর ভক্তদের বৈষ্ণব বলা হয়।
সারাংশ
ঈশ্বর যে দেবতা রূপে পালন করেন তাঁর নাম বিষ্ণু। বেদে বিষ্ণুর উল্লেখ আছে। বিষ্ণু ত্রিমূর্তির অন্যতম । বিষ্ণুর বাহন গরুড় পাখি। সকল পূজার সময় বিষ্ণুর পূজা করা হয় । বিভিন্ন পুরাণে বিষ্ণু বা কৃষ্ণের রূপ ও মাহাত্ম্য বর্ণনা করা হয়েছে। শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় কৃষ্ণের উপদেশ সংকলিত। বিষ্ণুর ভক্তদের বৈষ্ণব বলে।
আরও দেখুন :