Site icon Sanatan Gurukul [ সনাতন গুরুকুল ] GOLN

বৈদিক ও পৌরাণিক দেব-দেবীর সাধারণ পরচিতি

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় বৈদিক ও পৌরাণিক দেব-দেবীর সাধারণ পরচিতি

বৈদিক ও পৌরাণিক দেব-দেবীর সাধারণ পরচিতি

 

 

বৈদিক দেব-দেবী

বেদে দেবতাদের তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা—

ক. স্বর্গের দেবতা;

খ. অন্তরীক্ষ লোকের দেবতা;

গ. মর্ত্যের দেবতা ।

স্বর্গের দেবতা

স্বর্গের দেবতাদের ক্ষমতাই শুধু বোঝা যায় । তাঁরা মর্ত্যলোকে বা পৃথিবীতে আসেন না। যেমন- সূর্য, যম, বরুণ প্রভৃতি।

অন্তরীক্ষ লোকের দেবতা

অন্তরীক্ষ লোকের দেবতারা মর্ত্যে আসেন কিন্তু থাকেন না। যেমন- ইন্দ্র, বায়ু ইত্যাদি। ইন্দ্র বৃষ্টি ও শিশিরের দেবতা।

মর্ত্যের দেবতা

মর্ত্যের বা পৃথিবীর দেবতারা পৃথিবীতে আসেন, থাকেন এবং আমরা তাঁদের দেখতে পাই। যেমন- অগ্নি । অগ্নিকে আমরা দেখতে পাই। অগ্নি পৃথিবীতে অবস্থানও করেন। অগ্নি দেব পৃথিবীতে অবস্থান করেন বলে অগ্নি প্রজ্বলিত করে সেই অগ্নিতে ঘৃত, পিঠা, পায়েস, মাংস প্রভৃতি ভাল ভাল জিনিস উৎসর্গ করে অগ্নির মাধ্যমে অন্য দেবতাদের আহ্বান জানানো হয়। অগ্নির মাধ্যমে আহূত আমাদের দেওয়া দ্রব্যাদি দেবতাদের কাছে পৌঁছে যায় ।

এই যে অগ্নি প্রজ্বলিত করে, বেদের মন্ত্র উচ্চারণ করে দেবতাদের আহ্বান জানানো, শ্রদ্ধা জানানো, তাঁদের কাছে মঙ্গল প্রার্থনা করা, একে বলে যজ্ঞ। বৈদিক যুগের উপাসনা ছিল এই যজ্ঞভিত্তিক। আমরা জানি বৈদিক দেবতাদের কোন বিগ্রহ বা মূর্তি ছিল না।

তবে বৈদিক মন্ত্রে দেবতাদের রূপ ও ক্ষমতার বর্ণনা আছে। বেদে অগ্নি, সূর্য, ইন্দ্র, বিষ্ণু, বায়ু, সোম, বরুণ, রুদ্র, যম, প্রভৃতি দেব, ঊষা, বাক, সরস্বতী প্রভৃতি দেবীর বর্ণনা পাওয়া যায়। নিম্নে সংক্ষেপে বৈদিক দেবতা অগ্নি দেব এবং ঊষা দেবীর
পরিচয় দেয়া হল।

অগ্নি

ঋগবেদে বর্ণিত প্রধান দেবতাদের মধ্যে অগ্নি অন্যতম। অগ্নিকে দেবতাদের মুখ বলে বর্ণনা করা হয়েছে। কারণ অগ্নি মুখে দেবতাগণ ভোজন করেন। এর অর্থ হল, অগ্নির মাধ্যমে দেবতাদের কাছে দ্রব্যাদি উৎসর্গ করা হয়। অগ্নিকে অন্যান্য বৈদিক দেবতাদের দূতও বলা হয়েছে। কারণ তিনি দেবতাদের কাছে যজ্ঞকারীর প্রদত্ত দ্রব্য পৌঁছে দেন। অগ্নিই যজ্ঞের অবলম্বন। অগ্নিকে যজ্ঞকারী পুরোহিত বলেও বর্ণনা করা হয়েছে।

 

গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

ঊষা

বেদে দেবদের চেয়ে দেবীদের সংখ্যা কম। এঁদের মধ্যে ঊষা প্রধান। সূর্যোদয়ের ঠিক পূর্ব মুহূর্তে পূবের আকাশে যে মনোমুগ্ধকর অরুণ বর্ণ দেখা যায়, তাকেই বলা হয়েছে ঊষা। ঊষা দেবী রাতের অন্ধকার দূর করেন। তিনি আলোকোজ্জ্বল জগতের সন্ধান দেন। তাঁর আগমনে জীবজগৎ কর্মচঞ্চল হয়ে ওঠে।

পৌরাণিক দেব-দেবী

পুরাণে যে-সকল দেবতার কথা বলা হয়েছে, তাঁরা পৌরাণিক দেবতা। পৌরাণিক যুগে দেব-দেবীর প্রতিমা বা বিগ্রহ নির্মাণ করে পূজা করার প্রথা প্রচলিত হয়। এ-যুগে পৌরাণিক দেব-দেবীর মধ্যে অনেকের রূপেরও পরিবর্তন ঘটেছে। অনেক নতুন দেব-দেবীরও আবির্ভাব ঘটেছে। মন্ত্রে যে-ভাবে দেব-দেবীর বর্ণনা করা হয়েছে, সে-ভাবে তাদের মূর্তি নির্মাণ করা হয়েছে।

পৌরাণিক যুগে মন্দির নির্মাণ করে তাতে দেব-দেবীর প্রতিমা স্থাপন করে পূজা করার পদ্ধতি প্রচলিত হয়েছে। পত্র-পুষ্পের অঞ্জলি দিয়ে নৈবেদ্য বা ভোগ দিয়ে বাজনা বাজিয়ে ঘটা করে পৌরাণিক দেবদেবীর পূজা করা হয়। কোন কোন দেব-দেবীর পূজা প্রতিদিনই করা হয়। যেমন- শিব, লক্ষ্মী প্রভৃতি। আবার কোন কোন দেব-দেবীর পূজা বিশেষ বিশেষ তিথিতে করা হয়।

যেমন- ব্রহ্মা, দুর্গা, কার্তিক, সরস্বতী প্রভৃতি। অবশ্য প্রতিদিন যে-সকল দেব-দেবীর পূজা করা হয়, বিশেষ বিশেষ তিথিতেও তাঁদের অনেকের পূজা করা হয়। যেমন- বিষ্ণু বা নারায়ণ, গণেশ, শিব সহ আরও পাঁচজন দেবতা ।

সারাংশ

বৈদিক দেব-দেবীর কোন মূর্তি বা বিগ্রহ নেই। মন্ত্রের মাধ্যমে তাঁদের রূপ ও ক্ষমতার বর্ণনা করা হয়। বেদে দেবতাদের তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা- (ক) স্বর্গের দেবতা, (খ) অন্তরীক্ষ লোকের দেবতা, (গ) মর্ত্যের দেবতা। বেদে অগ্নি সূর্য, ইন্দ্র, বিষ্ণু, বায়ু, সোম, বরুণ, রুদ্র, যম প্রভৃতি দেব, ঊষা, বাক, সরস্বতী প্রভৃতি দেবীর বর্ণনা পাওয়া পায় । পুরাণে যে-সকল দেব-দেবীর বর্ণনা করা হয়েছে, তাঁরা পৌরাণিক দেবতা।

 

 

পৌরাণিক যুগে মন্ত্রের বর্ণনা অনুসারে দেব-দেবীর প্রতিমা নির্মাণ করে তাঁদের পুষ্প-পত্র, নৈবেদ্য দিয়ে পূজা করা হয়। পৌরাণিক যুগে এসে বৈদিক যুগের অনেক দেবতার রূপেরও পরিবর্তন ঘটেছে। অনেক লৌকিক দেবতার বর্ণনা পুরাণেও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

আরও দেখুন :

Exit mobile version