ভোজরাজের দ্বারা আৰ্য্যধর্মের প্রবাহ সচল, কলির দুরবস্থা ও বিষ্ণুর আশ্বাস – ভবিষ্য পুরাণ – পৃথ্বীরাজ সেন

ভোজরাজের দ্বারা আৰ্য্যধর্মের প্রবাহ সচল, কলির দুরবস্থা ও বিষ্ণুর আশ্বাসঃ শালিবাহনের বংশের শেষ রাজা ছিলেন রাজা ভোজরাজ। ভোজরাজের মনে খুব দুঃখ।

কারণ শালিবাহন যে প্রতাপে রাজত্ব করে গেছেন, সেই প্রতাপ কমতে কমতে তার আমলে একেবারে নিশ্চিহ্ন, হয়ে গিয়েছিল। তিনি চিন্তা করতে লাগলেন কেমন করে হৃত গৌরব উদ্ধার করা যায়।

শাস্ত্রবল, লোকবল, অর্থবল কোন কিছুরই তাঁর অভাব ছিল না। তাঁর রাজসভায় বহু শাস্ত্রজ্ঞ ব্রাহ্মণ পণ্ডিত ছিলেন। কিন্তু হৃত গৌরব উদ্ধারের উপায় খুঁজে তিনি পাচ্ছিলেন না।

ভোজরাজের দ্বারা আৰ্য্যধর্মের প্রবাহ সচল, কলির দুরবস্থা ও বিষ্ণুর আশ্বাস - ভবিষ্য পুরাণ - পৃথ্বীরাজ সেন

ভোজরাজের দ্বারা আৰ্য্যধর্মের প্রবাহ সচল, কলির দুরবস্থা ও বিষ্ণুর আশ্বাস – ভবিষ্য পুরাণ – পৃথ্বীরাজ সেন

অনেক চিন্তা করে ভোজরাজ দিগ্বিজয়ে যাওয়াই ঠিক করলেন। বিক্রমাদিত্য না থাকায় এখন তাই ম্লেচ্ছদের আধিপত্য আবার প্রবল হয়েছে।

বহু সৈন্য-সামন্ত নিয়ে দিগ্বিজয় বেরিয়ে পড়লেন ভোজরাজ। কয়েকজন ব্রাহ্মণও সঙ্গে ছিলেন। কবিশ্রেষ্ঠ কালিদাসও রাজার সঙ্গে ছিলেন।

গান্ধার, কাশ্মীর, নারব, প্রভৃতি দেশ তিনি একে একে জয় করলেন। তারপর সিন্ধুতীরে এসে সেখানে মরুস্থলে তিনি শিবের আরাধনা করলেন।

হঠাৎ আকাশবাণী হল–তুমি কালেশ্বরে যাও ভোজরাজ। বাহিক দেশটাকে গ্রাস করেছে ম্লেচ্ছরা। পূর্বকালে যে ত্রিপুরকে আমি বিনাশ করেছিলাম, আমারই বরে মহমদ নামে তাদের একজন বাহিক দেশকে মোহগ্রস্ত করেছে।

সে পিশাচ ধর্মে অতিশয় দক্ষ। আমার প্রাসাদে তোমার কোন ভয় থাকবে না।

ভোজরাজের দ্বারা আৰ্য্যধর্মের প্রবাহ সচল, কলির দুরবস্থা ও বিষ্ণুর আশ্বাস - ভবিষ্য পুরাণ - পৃথ্বীরাজ সেন

আকাশবাণী শুনে বাহিকে ফিরে গেলেন ভোজরাজ। একদিন মহমদ রাজার সঙ্গে দেখা করতে এসে বলল–যে দেবতাদের তোমরা পূজা করো, এখন তারা আমাদের চাকর। এমনকি তারা আমাদের এঁটো পর্যন্ত খায়।

এমন দুর্বাক্য শুনে কালিদাস ভীষণভাবে রেগে গিয়ে বললেন–নরাধম, তুই যা নয় তাই বললি। এখন দেখ আমাদের ক্ষমতা।

এই কথা বলে কালিদাস ব্রাহ্মণদের দিয়ে নিষ্ঠার সঙ্গে দশ হাজার নবার্ণ মন্ত্র জপ করে এমন এক যজ্ঞ করলেন, সেই মহমদ তাতে পুড়ে ছাই হয়ে গেল।

এভাবে গুরুর মৃত্যু দেখে তার শিষ্যরা ভয়ে গুরুর পোড়ানোর কিছু ছাই নিয়ে পালিয়ে গেল মহদীনপুরে। সেখানে মৃত গুরুর ছাই সযত্নে রেখে তারা বসবাস করতে লাগল। সেই মহদীনপুর হল স্নেছেদের তীর্থস্থান।

একদিন সেই মায়াবী মহমদ বিকটাকার মূর্তি ধরে রাত্রিবেলা ভোজরাজকে স্বপ্নে দেখা দিয়ে বলল– রাজা, আমি স্বীকার করছি যে তোমাদের আর্যধর্ম খুবই শক্তিশালী।

ভোজরাজের দ্বারা আৰ্য্যধর্মের প্রবাহ সচল, কলির দুরবস্থা ও বিষ্ণুর আশ্বাস - ভবিষ্য পুরাণ - পৃথ্বীরাজ সেন

তাই বলে আমি কখনই তোমাদের পদানত হব না। আমিও পৃথিবীতে তোমাদের প্রতিপক্ষ ধর্ম স্থাপন করব। তোমাদের ধর্মে অনেক বিধি-নিষেধ, খাদ্যের বিচার আছে। ওসব কিছুই আমাদের ধর্মে থাকবে না।

যাই হোক, লুপ্তপ্রায় আর্যধর্মকে ভোজরাজ পুনরুদ্ধার করলেন। যবনরা তাদের আচার নিয়ে সিন্ধুর ওপারেই থেকে গেল। আর যারা আর্যাবর্তে থেকে গেল তারা আর্যধর্মের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে লাগল।

ভোজরাজ এখন আর নেই। কিন্তু তিনি যে আর্যধর্মের প্রবাহকে ত্বরান্বিত করেছেন এখনও সেই প্রবাহ চলছে। শুরু হল ধর্মলোচনা। ম্লেচ্ছরা আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারল না।

ভোজরাজের দ্বারা আৰ্য্যধর্মের প্রবাহ সচল, কলির দুরবস্থা ও বিষ্ণুর আশ্বাস - ভবিষ্য পুরাণ - পৃথ্বীরাজ সেন

কলির হল বড় বিপদ। তার অস্তিত্বই যে লোপ পাবে। তিনি বিষ্ণুর স্তব-স্তুতি করলেন। বিষ্ণু আশ্বাস দিলেন–ভয় নেই কলি, তোমার জন্য আমি ম্লেচ্ছ রাজ্য স্থাপন করব।

আরও পড়ুনঃ

কল্মষপাদের কাহিনি – বিষ্ণুপুরাণ – পৃথ্বী-রাজ সেন

Leave a Comment