আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় লক্ষ্মী দেবী
Table of Contents
লক্ষ্মী দেবী
লক্ষ্মীর পরিচয়
ঈশ্বর যে দেবী রূপে নিজ ঐশ্বর্য প্রকাশ করেন, তাঁর নাম লক্ষ্মী। লক্ষ্মী দেবী ধন, সম্পদ, সুখ ও সমৃদ্ধি দান করেন। তিনি আমাদের ঈশ্বরের ঐশ্বর্যকে বোঝার ক্ষমতাও দান করেন। পুরাণে আছে দেবতা ও দৈত্যেরা মিলে একবার সমুদ্র-মন্থন করেন। সেই সমুদ্র-মন্থনের সময় লক্ষ্মী-দেবী সমুদ্র থেকে উঠে আসেন । পুরাণে লক্ষ্মী-দেবীকে নারায়ণের স্ত্রীরূপে বর্ণনা করা হয়েছে।
লক্ষ্মীর রূপ
লক্ষ্মী দেবী অতুলনীয় সুন্দরী। তিনি গৌরবর্ণা। আমরা নিত্য যে লক্ষ্মী প্রতিমার পূজা করি তাঁর দুটি হাত। ডান হাতে পদ্ম ফুল। বাম হাতে শস্যের ছড়া। বাঁ-কোলে ধন-সম্পদের ঝাঁপি । লক্ষ্মী-দেবী সর্ব প্রকার অলংকারে ভূষিত। মাথায় তাঁর সোনার মুকুট। তিনি রক্তপদ্মাসনা। পুরাণে লক্ষ্মী দেবীর আর একটি বর্ণনা পাওয়া যায়। সেখানে দেখা যায়, লক্ষ্মী-দেবীর চার হাত।
তাঁর এক হাতে পাশ (দড়ির ফাঁস) ও অক্ষমালা। আরেক হাতে পদ্ম ফুল ও অঙ্কুশ (হাতি-চালনার দণ্ড)। একটি হাতে স্বর্ণপদ্ম। একটি ডান হাত তুলে তিনি ভক্তকে দান করছেন বর ও অভয়। লক্ষ্মীর বাহন পেঁচা।
লক্ষ্মী পূজার সময়
লক্ষ্মী দেবী গৃহদেবতারূপে নিত্যপূজার দেবী। প্রতি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বা রাতে লক্ষ্মীপূজা করা হয়। এ-ছাড়াও বছরের বিভিন্ন সময়েও বিশেষভাবে লক্ষ্মীপূজা করা হয়। আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের পূর্ণিমা তিথিতে প্রতিমা নির্মাণ করে ঘটা করে লক্ষ্মীপূজা করা হয়। এ পূর্ণিমাকে লক্ষ্মীপূর্ণিমা বা কোজাগরী পূর্ণিমা বলা হয় ।
লক্ষ্মীর মাহাত্ম্য
লক্ষ্মী-দেবী ঈশ্বরের ঐশ্বর্যকে প্রকাশ করেন। তিনি আমাদের শুধু পার্থিব ধন-সম্পদই দান করেন না, তিনি আমাদের ঈশ্বর ভক্তি দেন, ঈশ্বরের বিরাটত্ব ও মহিমাকে, তাঁর ঐশ্বর্যকে বোঝার ক্ষমতা দান করেন। লক্ষ্মী-দেবী সমুদ্র-সম্ভবা। এর একটি তাৎপর্য আছে। সমুদ্র থেকে রত্ন পাওয়া যায়। সমুদ্র-মন্থনের মতই খনি ও বন অনুসন্ধান করে বিভিন্ন সম্পদ পাওয়া যায়।
ভূমি কর্ষণ করে ফসল ফলাতে হয়। বাণিজ্যও এক ধরনের সমুদ্র-মন্থন। ভাগবতে লক্ষ্মী-দেবীকে বলা হয়েছে ‘জীবনোপায়রূপিণী’। লক্ষ্মী-দেবী সর্বজীবের জীবন ধারণের জন্য জীবিকার উপায় করে দেন। লক্ষ্মীর সৌন্দর্য শান্ত ও সৌম্য। তা মনে শ্রদ্ধা ও প্রশান্তি জাগিয়ে তোলে। তাই শান্ত-সুন্দর কোন মেয়েকে আমরা বলি ‘লক্ষ্মী মেয়ে’।
ধর্মগ্রন্থে আছে, লক্ষ্মীদেবী নিজেই বলেছেন যে, ঈশ্বর, পিতা- মাতা, গুরু, অতিথি প্রভৃতিকে যে সকল বাড়িতে শ্রদ্ধা করা হয় না, তিনি সে সকল বাড়িতে কখনও প্রবেশ করেন না। এছাড়া যে সকল বাড়িতে মিথ্যেবাদী, ঝগড়াটে, বিশ্বাসঘাতক, কৃতঘ্ন (যে উপকারীর অপকার করে) কেবল নেই বলে হাহাকার করে, এমন লোক থাকে লক্ষ্মী-দেবী সে সকল বাড়িতেও যান না ।
লক্ষী দেবী সন্তুষ্ট হলে আমাদের জীবন সমৃদ্ধ হয় এবং মন সুন্দর হয়।
সারাংশ
ঈশ্বর যে দেবতা রূপে নিজ ঐশ্বর্য প্রকাশ করেন, তাঁর নাম লক্ষ্মী। বেদে ও পুরাণে লক্ষ্মী-দেবীর উল্লেখ আছে। লক্ষ্মী-দেবী শান্ত ও সৌম্য। তাঁর সৌন্দর্য অতুলনীয়। পেঁচা তাঁর বাহন। গৃহদেবতারূপে নিত্য লক্ষ্মীর পূজা করা হয়। প্রতি সপ্তাহে বৃহস্পতিবারে সন্ধ্যায় বা রাতে লক্ষ্মীপূজা করা হয়। বিশেষভাবে আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের পূর্ণিমা তিথিতে কোজাগরী লক্ষ্মীর পূজা করা হয়।
আরও দেখুন :