শঙ্করাচার্য জীবনচরিত

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় শঙ্করাচার্য জীবনচরিত

শঙ্করাচার্য জীবনচরিত

 

শঙ্করাচার্য জীবনচরিত

 

শঙ্করাচার্য জীবনচরিত

শঙ্করাচার্য ৭৮৮ খ্রিস্টাব্দে বৈশাখী শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে দাক্ষিণাত্যের কেরল রাজ্যের কালাড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা শিবগুরু ও মাতা সুভদ্রা (বিশিষ্টা)। শিবগুরু শাস্ত্রজ্ঞ ব্রাহ্মণ এবং শিবভক্ত । সুভদ্রাও ভক্তিমতী ছিলেন। তাঁদের কোন সন্তান জন্মেনি। ধর্মপ্রাণ স্বামী-স্ত্রীর বিশ্বাস ছিল দেবানুগ্রহে সবই সম্ভব। তাই তাঁরা চন্দ্রমৌলীশ্বরের অর্থাৎ শিবের আরাধনা করতে লাগলেন। আরাধনায় শিব সন্তুষ্ট হলেন।

একদিন স্বামী-স্ত্রী শুনতে পেলেন মহেশ্বরের বাণী, “আমি বরদান করছি, শিবকল্প এক মহাজ্ঞানী পুত্রলাভ করবি। দিকে দিকে ঘোষিত হবে তার জয়বার্তা।” যথাসময়ে পুত্রলাভ করে স্বামী-স্ত্রী উভয়েই খুব খুশি হলেন। দেবতার অনুগ্রহের কথা স্মরণ করে শিবগুরু পুত্রের নাম রাখলেন শঙ্কর। জনশ্রুতি আছে, স্বয়ং মহাদেবই শঙ্করাচার্যরূপে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

তিন বছরের শঙ্করকে রেখে তাঁর পিতা পরলোকগমন করেন। তখন পুত্রের লালন-পালনসহ শিক্ষা দীক্ষার দায়িত্ব মায়ের উপর এসে পড়ে। বুদ্ধিমতী সুভদ্রা পুত্রকে পাঁচ বছর বয়সে গুরুগৃহে পাঠান। শৈশব থেকেই শঙ্কর ছিলেন অসাধারণ মেধাবী। তাই অতি অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি সর্বশাস্ত্রে পাণ্ডিত্য অর্জনে সমর্থ হন। দেখতে দেখতে তার খ্যাতি দাক্ষিণাত্যের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে।

একদল শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিত এলেন শঙ্করের সঙ্গে শাস্ত্রালাপ করবার জন্য। শঙ্করের পাণ্ডিত্যে তারা সত্য সত্যই মুগ্ধ ও বিস্মিত হলেন। এবারে তারা শঙ্করের মায়ের নিকট বালকের জন্মকুণ্ডলী দেখতে চাইলেন। ‘জন্মকুণ্ডলী’ দেখেই পণ্ডিতগণ আতঙ্কিত হলেন। মাতাও ব্যাকুল হয়ে তাদের কাছে ছেলের ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে জানবার জন্য প্রার্থনা নিবেদন করলেন।

তাঁরা বললেন, বালকের আয়ু অল্প; ১৬ বছর ও ৩২ বছরে জীবনহানির যোগ আছে। শঙ্করের মায়ের দুচোখ বেয়ে জলের ধারা নামল। শঙ্কর মাকে সান্ত্বনা দিলেন । বিষয় সম্পত্তির প্রতি শঙ্করের কোন আকর্ষণ ছিল না। এ সম্পর্কে একটি কাহিনী রয়েছে। তখন কেরলের রাজা ছিলেন চন্দ্রশেখর। শঙ্করের অলৌকিক প্রতিভার কথা তিনি জানতে পারেন। শঙ্করকে সম্মান জানানোর ইচ্ছায় তাঁকে রাজপ্রাসাদে আমন্ত্রণ জানালেন।

মন্ত্রী এলেন শঙ্করের কাছে। কিন্তু তাঁকে রাজধানীতে নিয়ে যেতে পারলেন না। শঙ্কর বললেন, “মন্ত্রীবর! আমি ভিক্ষুক ব্রাহ্মণ, কৃপা করে আমাকে রাজ-সম্মানের প্রলোভন দেখাবেন না।” মন্ত্রী হতাশ হয়ে ফিরলেন। তাঁর কাছে এই কথা শুনে রাজার শ্রদ্ধা আরও বেড়ে গেল। তিনি স্বয়ং কালাড়িগ্রামে এলেন এবং শঙ্করের দর্শন লাভ করে নানা তত্ত্বালোচনায় মুগ্ধ হলেন।

বালকের ঐশী শক্তিতে মুগ্ধ হয়ে রাজা তাঁর চরণে প্রণামী স্বরূপ সহস্র মুদ্রা রাখলেন। নিরাসক্ত শঙ্কর একটি মুদ্রাও স্পর্শ করলেন না। রাজার অমাত্যদের দিয়ে ঐ অর্থ দরিদ্রদের মধ্যে বিলিয়ে দিলেন। শঙ্করাচার্য মাতৃভক্তও ছিলেন। দীর্ঘ সময় তিনি মায়ের সেবায় অতিবাহিত করতেন। মাতৃভক্তির উদ্দীপনায় শঙ্কর এক অলৌকিক ঘটনার সৃষ্টি করলেন। প্রতিদিন নদীতে স্নান করার অভ্যাস ছিল শঙ্কর জননীর।

 

গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন
গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

একদিন তিনি স্নান শেষে গৃহে ফেরার পথে ক্লান্ত হয়ে মূর্ছিতা হয়ে পড়েন। মায়ের ফিরতে বিলম্ব দেখে তার খোঁজে বের হলেন। কিছুদূর অগ্রসর হয়ে দেখলেন, তাঁর মা সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পথের পাশে পড়ে রয়েছেন। এ দৃশ্য দেখে শঙ্করের দুচোখ বেয়ে দরদর ধারায় অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। মায়ের সেবা করে পবিত্র মনে শঙ্কর ভগবানের কাছে প্রার্থনা করলেন, “ভগবান ! মা আমার বৃদ্ধা হয়েছেন।

এ পথশ্রম তাঁর আর সহ্য হয় না। কৃপা করে তুমি নদীর প্রবাহটি আমার বাড়ির নিকটে এনে দাও, আমার মায়ের তাহলে আর কষ্ট হবে না।” শঙ্করের এ প্রার্থনা পূর্ণ হয়েছিল। অল্পদিনের মধ্যেই সে নদীর গতি পরিবর্তিত হয়ে শঙ্করের গৃহের নিকট দিয়েই প্রবাহিত হয়েছিল। শঙ্কর জানতেন, বেশি দিন তিনি বাঁচবেন না। তাই তিনি সংসারে অবরুদ্ধ হতে চান নি।

সংসার ত্যাগের সংকল্প নিলেন শঙ্কর। কিন্তু মা একমাত্র সন্তানকে কিছুতেই সংসার ত্যাগ করতে দিতে চান না। শঙ্কর মাকে বুঝালেন, “মাগো, তোমায় কথা দিচ্ছি, সন্ন্যাস নিই আর যেখানেই থাকি, তোমার অন্তিমকালে নিশ্চয়ই আমি তোমার কাছে উপস্থিত থাকব, তোমার পারলৌকিক কাজে কোন বাধা হবে না মা।” শঙ্কর জননীর মনে পড়ল, শঙ্করের জন্মের আগের কথা, সেই দৈবাদেশ আর ভবিষ্যদ্বাণী।

তাই তিনি শঙ্করের সন্ন্যাস গ্রহণে আর বাধা দিলেন না। শাস্ত্রজ্ঞ শঙ্কর সব রকম আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে সন্ন্যাস গ্রহণ করে সংসার ত্যাগ করে চলে যান। গুরু গোবিন্দপাদের নিকট অবস্থান করছেন শঙ্কর। কয়েক বছর শাস্ত্রাধ্যয়ন ও তপস্যা করে তিনি আধ্যাত্মিক শক্তি সঞ্চয় করেন। তখন গুরু গোবিন্দপাদ তাঁকে বললেন, “বৎস, এখন থেকে স্মরণ রেখ যে, এক মহান ব্রত উদযাপনের জন্য তুমি নিযুক্ত হলে।

আমার ইচ্ছা, তুমি নতুন করে ধর্মের ব্যাখ্যা রচনা কর। জগতে প্রচার কর ঈশ্বর এক, তিনি অদ্বিতীয়। ধর্মসাধনার পথ থেকে সংস্কারের আবর্জনা দূর কর। সন্ন্যাসী সম্প্রদায়কে শৃঙ্খলাবদ্ধ কর, ধর্ম সাধনার পথে তাদের নিযুক্ত কর। কারণ, মুক্তিপিপাসু মানবজাতি তোমার দিকে চেয়ে আছে।”

 

শঙ্করাচার্য আদর্শ জীবনচরিত

 

শঙ্করাচার্য ৭৮৮ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। আজন্ম মেধাবী শঙ্কর অতি অল্প সময়ের মধ্যে সর্বশাস্ত্রে পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। অন্তিম সময়ে মায়ের নিকটে থাকবেন এই কথা বলে মায়ের অনুমতি নিয়ে শঙ্কর সন্ন্যাস গ্রহণ করেন। গুরু গোবিন্দপাদের নিকট দীক্ষিত হন। তিনি গুরু গোবিন্দপাদ তাঁকে ঈশ্বর অদ্বিতীয় একথা প্রচার করতে এবং নতুন করে ধর্মের ব্যাখ্যা রচনা করার উপদেশ দেন।

Leave a Comment