আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় শ্রীশ্রীচণ্ডী ধর্মগ্রন্থ
Table of Contents
শ্রীশ্রীচণ্ডী ধর্মগ্রন্থ
শ্রীশ্রীচণ্ডী ধর্মগ্রন্থ
শ্রীশ্রীচণ্ডী অতি প্রাচীন ধর্ম গ্রন্থ। শ্রীশ্রীচণ্ডী মার্কণ্ডেয় ঋষি দ্বারা প্রণীত মার্কণ্ডেয় পুরাণের অন্তর্গত। চণ্ডীতে তেরটি অধ্যায় ও ৭০০ টি শ্লোক আছে। এজন্য গীতার মত একেও সপ্তশতী বলা হয়। আদ্যা শক্তি মহামায়া। তিনি মায়া ও শক্তির দেবী। অসুর বা অন্যায়কে তিনি ধ্বংস করেন। তিনি দুর্গারূপে জীবের দুর্গতি হরণ করেন বলে তাঁর এক নাম দুর্গা। এই গ্রন্থে সুন্দর সুন্দর স্তোত্র আছে। যথা:
যা দেবী সর্বভূতেষু শক্তিরূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ॥
যা দেবী সর্বভূতেষু শান্তিরূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ॥”
অর্থাৎ যে দেবী সকল জীবে ও চরাচরে শক্তিরূপে অবস্থান করেন সেই দেবীকে নমস্কার, বারবার নমস্কার। যে দেবী সকল জীবে ও চরাচরে শান্তিরূপে অবস্থান করেন। তাঁকে নমস্কার বারবার নমস্কার ।
শ্রীশ্রীচণ্ডীর বিষয়বস্তু নিম্নরূপ
পুরাকালে সুরথ নামে এক রাজা রাজ্য হারিয়ে বনে বনে ঘুরছিলেন। ঘুরতে ঘুরতে তিনি এলেন মেধা নামে এক মহর্ষির আশ্রমে। অন্যদিকে সমাধি নামে এক বৈশ্যও স্ত্রী ও সন্তানদের আচরণে অসন্তুষ্ট হয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন। তিনিও ঘুরতে ঘুরতে আসেন মেধা মুনির আশ্রমে। রাজ্য হারিয়েও রাজ্যের জন্য রাজা সুরথের মনে মায়া ছিল।
সমাধি বৈশ্যও তার স্ত্রী-পুত্রদের ভুলতে পারছিলেন না। কেন এই অন্তরের আকর্ষণ! রাজা সুরথ ও সমাধি বৈশ্যের দেখা হল। দুজনে দুজনের মনের কথা ব্যক্ত করলেন। তারপর গেলেন মহর্ষি মেধার কাছে। গিয়ে জানালেন নিজেদের অন্তরের টানের কথা। মহর্ষি মেধা বললেন যে এর নাম মায়া। আর এ মায়া হচ্ছে মহামায়ার প্রভাব। তবে সন্তুষ্ট হলে মহামায়া মঙ্গল করেন এবং মুক্তি দান করেন।
মেধা মহামায়ার মাহাত্ম্য রাজা সুরথ ও সমাধি বৈশ্যের কাছে বর্ণনা করলেন। মহামায়ার একটি কীর্তি হল মহিষাসুর বধ। তিনি দুর্গারূপে দুর্ধর্ষ অসুররাজ মহিষাসুরকে বধ করেছিলেন। কাহিনীটি শোনা যাক :
পুরাকালে দেবতাদের রাজা ইন্দ্র এবং অসুরদের রাজা মহিষাসুরের সঙ্গে ভীষণ যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে দেবতারা স্বর্গ হতে বিতাড়িত হয়ে মর্ত্যে বিচরণ করতে থাকেন। একদিন রাজ্যহারা দেবতারা একত্রিত হয়ে ব্রহ্মাকে অগ্রগামী করে মহাদেব ও বিষ্ণুর নিকট উপস্থিত হলেন। সকলের উপস্থিতিতে অসুরদের অত্যাচারের কাহিনী বর্ণিত হল।
তখন ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব ও অন্যান্য দেবতাদের শরীর থেকে তেজোরাশি একত্রিত হয়ে এক দেবী মূর্তি ধারণ করলেন। তখন সকল দেবতা তাদের অস্ত্র দিয়ে দেবীকে সুসজ্জিত করেন। দিব্য অস্ত্রে সুসজ্জিতা দেবী দুর্গা তাঁর দশ বাহু উত্তোলন করে অট্টহাস্য করলেন। স্বর্গ, মর্ত্য ও পাতাল ত্রিভুবন কম্পিত হয়ে উঠল। দেবতারা সেই সিংহবাহিনীর জয়ধ্বনি করতে লাগলেন।
মুনিগণ ভক্তিভরে দেবীর স্তব করতে লাগলেন । এদিকে মহিষাসুর হাজার হাজার সৈন্য নিয়ে দেবীর দিকে ধাবিত হল। ঘোরতর যুদ্ধ হল। যুদ্ধে অসুর শক্তি পরাজয় বরণ করল। দেবতাদের তখন আনন্দ আর ধরে না। অসুরদের অত্যাচার হতে দেবগণ মুক্ত হলেন, ফিরে পেলেন তাদের স্বর্গ রাজ্য। দেবগণ ও মুনিগণ দেবীর জয় গানে মুখরিত হল।
সর্বমঙ্গলমঙ্গল্যে শিবে সর্বার্থসাধিকে।
শরণ্যে ত্র্যম্বকে গৌরি নারায়ণি নমো হস্তুতে॥” (শ্রীশ্রীচণ্ডী)
তুমি সর্ব প্রকার কল্যাণদায়িনী। তুমি মঙ্গলময়ী। সর্ব প্রকার ইচ্ছাপূরণকারী। তাই তোমাকে বার বার নমস্কার করি।
সারাংশ
শ্রীশ্রীচণ্ডী হিন্দুদের একটি প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ। মার্কণ্ডেয় ঋষি কর্তৃক প্রণীত ও মার্কণ্ডেয় পুরাণের অন্তর্গত। শ্রীশ্রীচণ্ডীর একটি কাহিনী মহিষাসুর বধ। দেবী দুর্গা ও মহিষাসুরের মধ্যে ভীষণ এক যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে দেবী দুর্গার জয় হয়। দেবতারা মহিষাসুরের কাছে পরাজিত হয়ে স্বর্গ হারিয়েছিল। আর স্বর্গ ফিরে পেয়ে তাঁরা আনন্দিত হলেন এবং দেবীর উদ্দেশ্যে স্তব করলেন।
আরও দেখুন :