শ্ৰীকৃষ্ণ আদর্শ জীবনচরিত

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় শ্ৰীকৃষ্ণ আদর্শ জীবনচরিত

শ্ৰীকৃষ্ণ আদর্শ জীবনচরিত

 

শ্ৰীকৃষ্ণ আদর্শ জীবনচরিত

 

কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ ও ধর্মরাজ্য প্রতিষ্ঠা

কংস, জরাসন্ধ, শিশুপাল প্রমুখ কয়েকজন অত্যাচারী রাজার বিনাশ ঘটলেও তখনও বেশ কিছু লোভী অত্যাচারী রাজা রয়ে গেছেন। এদের মধ্যে সবচেয়ে ক্ষমতাসম্পন্ন ধৃতরাষ্ট্র ও দুর্যোধনাদি শতপুত্র রাজ্য লোভে এক সময় অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ করেছিলেন। পাণ্ডু ও ধৃতরাষ্ট্র ছিলেন দুই ভাই। ধৃতরাষ্ট্র জন্মান্ধ বলে ছোট ভাই পাণ্ডু রাজা হন। পাণ্ডুর মৃত্যুর পর যুধিষ্টিরাদি পঞ্চ-পাণ্ডবেরই রাজ্য পাওয়া উচিত।

কিন্তু ধৃতরাষ্ট্র ধর্মাধর্ম বিচার না করে পুত্রকে সমর্থন করলেন। দুর্যোধন পাণ্ডবদের বিষ প্রয়োগে এবং আগুনে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলেন। শেষ পর্যন্ত ধৃতরাষ্ট্র রাজ্য দু’ভাগ করে দুর্যোধন ও যুধিষ্ঠিরকে প্রদান করলেন। ইন্দ্রপ্রস্থ হল পাণ্ডবদের নতুন রাজধানী । অর্ধেক রাজ্য লাভ করেও দুর্যোধন খুশি নন। গোটা রাজ্যটাই তার চাই। কপট পাশা খেলায় পাণ্ডবদের হারিয়ে বার বছরের জন্য বনবাসে এবং এক বছরে অজ্ঞাতবাসে পাঠালেন।

শর্ত হল, তের বছর পর পাণ্ডবগণকে তাদের রাজ্য ফিরিয়ে দেওয়া হবে। পাণ্ডবগণ ছিলেন ধর্মপরায়ণ। পূর্ব শর্তানুযায়ী পাণ্ডবগণ বনবাস জীবনের পরে দুর্যোধনের নিকট তাদের রাজ্য ফিরে চাইলেন। কিন্তু অতি লোভী দুর্যোধন পাণ্ডবদেরকে ‘সূচ্যগ্র মেদিনী’ দিতেও সম্মত নন। এতে পাণ্ডবগণ চিন্তিত হয়ে পড়লেন। শ্রীকৃষ্ণের পরামর্শ চাইলেন তাঁরা। শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে পাণ্ডবদের রয়েছে আত্মীয়তা সম্বন্ধ।

এ ছাড়া অর্জুন হলেন শ্রীকৃষ্ণের সখা। দুর্যোধন ও ধৃতরাষ্ট্রের সব রকম অন্যায়ের কথা ছিল তাঁর জানা। পাণ্ডবদের পক্ষ হয়ে তিনি গেলেন দুর্যোধনের নিকট। উদ্দেশ্য আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা। কিন্তু না, দুর্যোধনের কঠোর মনোভাবের জন্য শ্রীকৃষ্ণের চেষ্টা সফল হল না। ফলে কুরু-পাণ্ডবের যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে উঠল। কুরুক্ষেত্র নামক স্থানে যুদ্ধ হল।

এই ভীষণ যুদ্ধে উভয়পক্ষের বহু লোক, বহু রাজা ও যোদ্ধা নিহত হলেন। যুদ্ধ শেষে ধর্মপ্রাণ পাণ্ডবগণ রাজ্য শাসনের ভার পেলেন। ধর্মের পতাকা উত্তীর্ণ হল । অধর্মের বিনাশ হল। ধর্মরাজ্য প্রতিষ্ঠিত হল। যুধিষ্ঠির রাজা হলেন। শ্রীকৃষ্ণের উপদেশে অশ্বমেধ যজ্ঞ করে পাণ্ডবগণ নিজেদের প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠিত করলেন।

 

গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন
গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা

ধর্মরাজ্য সংস্থাপনে শ্রীকৃষ্ণের গৌরবময় ভূমিকা রয়েছে। তবে সম্ভবত শ্রীকৃষ্ণের শ্রেষ্ঠ অবদান হচ্ছে তাঁর মুখনিঃসৃত বাণী যা পুস্তকাকারে নাম হয়েছে শ্রীমদ্ভগবদ্‌গীতা। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শুরু হওয়ার ঠিক পূর্বক্ষণে পাণ্ডবদের সেনাপতি অর্জুন হঠাৎ তাঁর রথের সারথি শ্রীকৃষ্ণকে বললেন, “আমি যুদ্ধ করব না, যুদ্ধ করলে আত্মীয়-স্বজন, পিতামহ ভীষ্ম, গুরুদেব দ্রোণাচার্য প্রমুখ পূজনীয় ব্যক্তিদেরকে হত্যা করতে হবে।

এছাড়া উভয়পক্ষের রাজন্যবর্গ, সৈন্য-সামন্ত নিহত হলে দেশ ও সমাজের অকল্যাণ হবে। এটি হবে অধর্মচারণ ; সুতরাং আমি যুদ্ধ করব না।” শ্ৰীকৃষ্ণ অর্জুনকে যুদ্ধে প্রবৃত্ত করানোর ইচ্ছায় ধর্মের সার কথা তুলে ধরলেন। তিনি বললেন, “দেখ অর্জুন, তুমি জ্ঞানবান, শ্রেষ্ঠ বীর। তুমি কি জীবনে মঙ্গল লাভ করতে চাও? জীবনের পরম উদ্দেশ্য হচ্ছে ঈশ্বর লাভ।

যুদ্ধ করেও তুমি ভগবানের দিকে এগিয়ে যেতে পারবে। তুমি সর্বতোভাবে একমাত্র ভগবানের শরণ লও। তিনি তোমাকে সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত করবেন।” শ্রীকৃষ্ণের এই উপদেশবাণীর মধ্যে রয়েছে সনাতন ধর্মের মূল কথা। এ কথা শুধু রাজার পক্ষে নয়, শুধু যুদ্ধক্ষেত্রে নয়, সবার পক্ষে, জীবনের সর্বক্ষেত্রেই এর উপযোগিতা রয়েছে।

ভগবানে মন নিবিষ্ট করে সাধক অনাসক্তভাবে কর্তব্য কর্ম সম্পাদনের মধ্য দিয়েই ভগবানের দিকে এগিয়ে যেতে পারেন। ঈশ্বর আরাধনার বিভিন্ন পথ আছে, জ্ঞান, কর্ম ও ভক্তি। যে কোন পথ ধরে সাধনা করলেই ভগবানকে লাভ করা যায়। নিষ্কাম কর্মের মাধ্যমে হয় জ্ঞানের উদয় এবং সে জ্ঞান ভক্তির সহযোগে সাধককে ভগবানের চরণে পৌঁছে দেয় এটাই গীতার সমন্বয়ের বাণী ।

লীলা সংবরণ

কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের পর শ্রীকৃষ্ণ দ্বারকায় ফিরে দীর্ঘদিন রাজত্ব করেন। বলরাম ধ্যানযোগে দেহ ত্যাগ করলে শ্রীকৃষ্ণও নশ্বর দেহ ত্যাগ করার সংকল্প করেন। বনে প্রবেশ করে একটি অশ্বত্থ বৃক্ষের তলে বসে আছেন শ্রীকৃষ্ণ। এমন সময় জরা নামক এক ব্যাধ দূর থেকে হরিণ ভেবে তাঁর চরণে শরবিদ্ধ করল । ঐ শরাঘাতে শ্রীকৃষ্ণ ইহলীলা সংবরণ করেন।

সারাংশ

কুরু ও পাণ্ডবদের মধ্যে রাজ্য নিয়ে বিবাদ। শ্রীকৃষ্ণ মীমাংসার চেষ্টা করে সফল হতে পারলেন না। কুরুক্ষেত্র নামক স্থানে ভীষণ যুদ্ধ হল। বহুলোক প্রাণ হারাল। যুদ্ধে পাণ্ডবগণ জয়লাভ করলেন। অশ্বমেধ যজ্ঞ করলেন তাঁরা। ধার্মিক পাণ্ডবদের প্রতিষ্ঠিত রাজ্য হল ধর্মরাজ্য। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের পূর্বক্ষণে অর্জুন বিষাদগ্রস্ত হন। তিনি যুদ্ধ না করার সিদ্ধান্ত নেন।

এমন অবস্থায় শ্রীকৃষ্ণ তাকে যে উপদেশ দেন সেটিই শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা। ঈশ্বর বা মোক্ষ লাভই মানব জীবনের প্রধান উদ্দেশ্য। কর্ম, জ্ঞান, ভক্তি প্রভৃতি সাধন পথেই ঈশ্বর লাভ সম্ভব। যিনি মনকে সর্বক্ষণ ঈশ্বরের চিন্তায় নিযুক্ত রাখেন তিনি সহজেই ঈশ্বরের কৃপা পেয়ে থাকেন। একান্তভাবে শরণাগত ব্যক্তিকে ভগবান সকল রকম পাপ থেকে উদ্ধার করেন।

Leave a Comment