Site icon Sanatan Gurukul [ সনাতন গুরুকুল ] GOLN

শ্ৰীকৃষ্ণ জীবনচরিত

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় শ্ৰীকৃষ্ণ জীবনচরিত

শ্ৰীকৃষ্ণ জীবনচরিত

 

 

শ্ৰীকৃষ্ণ জীবনচরিত

‘ব্রহ্মসংহিতায়’ বলা হয়েছে—কৃষ্ণ হচ্ছেন পরম ঈশ্বর। তিনি সচ্চিদানন্দ বিগ্রহ। তিনি অনাদি ও অনন্ত সর্ব কারণের কারণ, তিনিই গোবিন্দ । অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণ বিশ্বের একমাত্র অধীশ্বর । ঈশ্বর সর্বশক্তিমান। তিনি অসীম, তিনি অনন্ত। তিনি সমস্ত জগতের সৃষ্টি, স্থিতি ও সংহার কর্তা; জ্ঞানীর নিকট তিনি নির্বিকার পরব্রহ্ম।

যোগীর নিকট তিনি পরমাত্মা, কর্মযোগীর নিকট তিনি ঈশ্বর, আবার ভক্তের নিকট তিনিই পরম করুণাময় ভগবান। ঈশ্বর সর্বশক্তিমান হওয়ায় তার পক্ষে কোন কাজই অসম্ভব নয়। তিনি জন্মরহিত, নিত্য, শাশ্বত হয়েও অবতাররূপে জন্মগ্রহণ করতে পারেন। তবে অবতাররূপে ভগবান বা ঈশ্বরের জন্মগ্রহণের হেতু সম্বন্ধে গীতায় ভগবান শ্ৰীকৃষ্ণ বলেছেন –

“ধর্মে গ্লানি, অধর্মের হয় যবে বাড় ।

হেনকালে জন্ম মোর জান তত্ত্বসার ।।

দুষ্টের বিনাশ আর সাধুর রক্ষণে।

যুগে যুগে জন্মি আমি ধর্ম সংস্থাপনে।।”

দুষ্টের দমন করে শিষ্টের পালন এবং ধর্মরক্ষার জন্য ঈশ্বর শ্রীকৃষ্ণরূপে অবতীর্ণ হয়েছিলেন।

জন্ম ও শৈশবলীলা

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আবির্ভূত হন দ্বাপর যুগে। ভোজরাজ বংশের রাজা কংস তখন মথুরার রাজা। পিতা উগ্রসেনকে সিংহাসনচ্যুত করে তিনি রাজা হয়েছিলেন। জেঠতুতো বোন দেবকীকে শূর বংশের বসুদেবের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছেন। বর-কনেকে রথে করে নেয়া হচ্ছে। রথের সারথি হচ্ছেন কংস নিজেই । এমন সময় আকাশে দৈববাণী হল–হে নির্বোধ, যাকে তুমি রথে নিয়ে যাচ্ছ, তার গর্ভের অষ্টম সন্তান তোমার প্রাণ হরণ করবে।

দৈববাণী শুনে কংস ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলেন। খড়গ হাতে দেবকীকে হত্যা করতে উদ্যত হলেন। বর বসুদেব কংসকে বললেন, “দেবকীকে আপনি বধ করবেন না। দেবকীর গর্ভের সকল সন্তানকেই আপনার হাতে তুলে দেওয়া হবে। আপনি তাদের হত্যা করতে পারবেন।” কথা শুনে কংস নিবৃত্ত হল। দেবকী ও বসুদেবকে কংস কারাগারে রুদ্ধ করে রাখল।

কারাগারেই একে একে দেবকীর ছয়টি সন্তানকে জন্মের পরই কংস হত্যা করল। সপ্তম সন্তানের সন্ধান পেল না। দেবকীর অষ্টম গর্ভে এলেন শ্রীকৃষ্ণ। ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথির সে রাতটি ছিল এক ভীষণ দুর্যোগময় রাত। প্রবল ঝড়-বৃষ্টিতে প্রকৃতি এক ভীষণ মূর্তি ধারণ করেছে। তখন যোগমায়ার প্রভাবে প্রহরীরা হয়েছে অচেতন।

দৈব-নির্দেশে বসুদেব সদ্যোজাত পুত্রকে নিয়ে কারাগার থেকে বের হয়ে গোকুলে নন্দরাজ পত্নী যশোদার পাশে রাখলেন এবং তাঁর নবজাত কন্যাকে নিয়ে এসে দেবকীর কোলে দিলেন।

 

গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

পরদিন ভোরে দেবকীর অষ্টম গর্ভের সন্তানকে বধ করার জন্য কংস ছুটে এলেন কারাগারে। দেবকীর অনেক কাকুতি-মিনতি অগ্রাহ্য করে সে শিশু কন্যাটিকে আছাড় মারার জন্য যেই তুলেছেন, অমনি সে কন্যা ঊর্ধ্ব দিকে চলে যেতে যেতে বলে গেল, “কংস, তোমাকে বধ করার জন্য নারায়ণ জন্মগ্রহণ করেছেন।” এ কথা শুনে কংস মৃত্যুর আশঙ্কায় দুশ্চিন্তা করতে লাগল ।

মথুরার সমস্ত শিশুকে হত্যা করার নির্দেশ দিল কংস। পুতনা বিষাক্ত স্তন দিয়ে অনেক শিশুকে হত্যা করল। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ এই পুতনার স্তন এমন কঠোরভাবে পান করেন যে, যন্ত্রণায় পুতনা সঙ্গে সঙ্গে মারা যায়। এই সংবাদে কংস বুঝতে পারল, কৃষ্ণই তার প্রধান শত্রু ।

বাল্যলীলা

নন্দরাজ পুত্র কৃষ্ণের কল্যাণ কামনায় গোকুল ছেড়ে বৃন্দাবনে আশ্রয় নিলেন। যতই দিন যাচ্ছে শ্রীকৃষ্ণের প্রতি কংসের আক্রোশ ততই বেড়ে যাচ্ছে। সে অক্রূরকে পাঠাল শ্রীকৃষ্ণের কাছে। অক্রূর শ্রীকৃষ্ণকে কংসের নিমন্ত্রণ ও গুপ্ত অভিসন্ধির কথা জানালেন। কৃষ্ণ ও বলরাম নিমন্ত্রণ গ্রহণ করে মথুরায় চলে যান। মল্লযোদ্ধারা কৃষ্ণ ও বলরামের সাথে যুদ্ধ করে মারা গেল।

এই ভীষণ দৃশ্য দেখার পর কংস ক্রোধে, ক্ষোভে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ল। মল্লক্ষেত্রে উপস্থিত নন্দ, বসুদেব এবং পিতা উগ্রসেনকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করার নির্দেশ দিল। কংসের এ আদেশ শুনে শ্রীকৃষ্ণ আর বিলম্ব করলেন না। কংসের মঞ্চে লাফিয়ে উঠে তাঁকে চুলে ধরে মাটিতে নামালেন এবং সেখানেই তাকে হত্যা করলেন। কংসের ভাই সুমালি ছুটে আসছিল ।

বলরাম তাকে বধ করেন। এরপর শ্রীকৃষ্ণ ও বলরাম দেবকী ও বসুদেবসহ অন্যান্য ব্যক্তিদের মুক্ত করেন এবং কংসের পিতা উগ্রসেনকে মথুরার রাজপদে বরণ করেন। এরপর শ্রীকৃষ্ণ ও বলরাম মথুরায় পিতা-মাতার সঙ্গে বাস করতে থাকেন।

জরাসন্ধ ও শিশুপাল বধ

কংসকে হত্যা করায় তার শ্বশুর অত্যাচারী রাজা জরাসন্ধ শ্রীকৃষ্ণের ওপর ভীষণ রেগে গেল। শ্রীকৃষ্ণকে বিনাশ করার উদ্দেশ্যে বিরাট সেনাবাহিনী নিয়ে মথুরা আক্রমণ করল । শ্রীকৃষ্ণ ও বলরাম অল্প সৈন্য নিয়ে দৈব-অস্ত্রের সহায়তায় জরাসন্ধের বাহিনীকে পরাস্ত করে তাকে বন্দি করলেন। বলরাম জরাসন্ধকে হত্যা করতে যাচ্ছিলেন। কৃষ্ণ তাকে সেবারের মত ছেড়ে দিলেন।

এ ঘটনায় জরাসন্ধ লজ্জাবোধ করল বটে কিন্তু পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়ার জন্য পর পর আঠার বার (মতান্তরে সতের বার) মথুরা আক্রমণ করে। পরে শ্রীকৃষ্ণ অতিষ্ঠ হয়ে ভীমসেনকে দিয়ে জরাসন্ধকে বধ করালেন।

এরপর শিশুপালের কথা

যুধিষ্ঠিরের রাজসূয় যজ্ঞে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে ভীষ্ম শ্রীকৃষ্ণকে সম্মান প্রদান করেন। এতে চেদিরাজ শিশুপাল রেগে গিয়ে শ্রীকৃষ্ণের নিন্দা করতে শুরু করে। শ্রীকৃষ্ণ এর আগে শিশুপালের অনেক অপরাধ ক্ষমা করেছিলেন। কিন্তু আর নয়, এবার তিনি চক্র দ্বারা শিশুপালের মাথা কেটে ফেললেন । জন্মাবধি কৃষ্ণ বিদ্বেষী সেই শিশুপালকে হত্যা করে শ্রীকৃষ্ণ ধর্ম রাজ্য প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত করলেন ।

শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং ঈশ্বর। অবতাররূপে ঈশ্বর মাঝে মাঝে জন্মগ্রহণ করে থাকেন। দ্বাপরযুগে বসুদেব দেবকীর সন্তানরূপে শ্রীকৃষ্ণ আবির্ভূত হয়েছিলেন। তিনি প্রতিপালিত হন নন্দ-যশোদার ঘরে। মথুরার রাজা কংস শ্রীকৃষ্ণকে বধ করার চেষ্টা করে শেষ পর্যন্ত সে নিজেই তাঁর হাতে প্রাণ হারায়। কংসের শ্বশুর জরাসন্ধ এবং চেদিরাজ শিশুপাল শ্রীকৃষ্ণের শত্রুতা করে মারা পড়ে। এরা ছিল সবাই অত্যাচারী; এদের মৃত্যুতে ধর্মরাজ্য প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়।

Exit mobile version