Site icon Sanatan Gurukul [ সনাতন গুরুকুল ] GOLN

স্রষ্টা ও সৃষ্টি

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় স্রষ্টা ও সৃষ্টি

স্রষ্টা ও সৃষ্টি

 

স্রষ্টা ও সৃষ্টি

বিচিত্র আমাদের প্রকৃতি। বিচিত্র আমাদের পরিবেশ। ওপরে সুনীল আকাশ। সেই আকাশে রয়েছে সূর্য, চন্দ্র, গ্রহ-উপগ্রহ আর নক্ষত্রের মেলা। পৃথিবীতে কোথাও রয়েছে উচ্চ পর্বতমালা। মাথায় তাদের বরফের সাদা মুকুট, সূর্যের আলোয় তা ঝলমল করে। আবার কোথাও আকাশের মতোই সুনীল সমুদ্র, ঢেউ তুলছে আর গর্জন করছে।

পর্বত থেকে ঝরনাধারা নেমে আসে, নেমে আসে নদ-নদী। বনভূমি, প্রান্তর আর লোকালয়ের ভেতর দিয়ে তারা বয়ে চলে—কুলকুল রবে চলতে চলতে সমুদ্রে গিয়ে মেশে। কোথাও মরুভূমি। তপ্ত বালুকণার মধ্য দিয়ে চলে উটের সারি। মাঝে মাঝে মরূদ্যান। আবার বনে কিংবা লোকালয়ে রয়েছে নানা রকমের বৃক্ষলতা।

বৃক্ষলতায় দেখা যায় নানা রকমের ফুল আর ফল। বছরের বিভিন্ন সময়ে প্রাকৃতিক দৃশ্যের মধ্যেও নানা পরিবর্তন দেখা যায় । গ্রীষ্মকালে সূর্য প্রখর তেজে জ্বলে ওঠে। বর্ষায় আকাশ ভরে যায় কালো মেঘে। অঝোরে বৃষ্টি নামে। শরতে সুনীল আকাশে ভেসে বেড়ায় সাদা সাদা মেঘ। শীতে প্রকৃতি কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে ঠক্‌ঠক্ করে কাপে। বসন্তে নতুন পাতা আর ফুলে ফুলে ছেয়ে যায় বৃক্ষলতা ।

পশু-পাখি, কীট-পতঙ্গের মধ্যেও রূপে ও বর্ণে নানা বৈচিত্র্য রয়েছে। মানুষের মধ্যেকার বৈচিত্র্য ও কম নয় । কেউ কালো, কেউ ফর্সা, কেউ লম্বা, কেউ বেঁটে। জীব ও জগতের মধ্যে, প্রকৃতি ও পরিবেশের মধ্যে যেমন বৈচিত্র্য রয়েছে, তেমনি আবার গভীর ঐক্যও রয়েছে। ঋতুচক্রের আবর্তন, দিবা-রাত্রির পালাবদল, গ্রহদের নিজ কক্ষপথে একই নিয়মে ঘুরে ঘুরে চলা প্রভৃতির মধ্যে গভীর ঐক্য ও শৃঙ্খলার পরিচয় পাওয়া যায়।

প্রকৃতি, পরিবেশ ও জীবের এ সৌন্দর্য, বৈচিত্র্য ও ঐক্য আপনা-আপনি হয়নি। এর মূলে একজন স্রষ্টা বা সৃষ্টিকর্তা আছেন। এই সৃষ্টিকর্তাকে আমরা ঈশ্বর বলি। তিনি জড়-অজড়, জীব-অজীব সব কিছুর স্রষ্টা। তিনি নিয়ন্ত্রণ করছেন বলেই প্রকৃতি, পরিবেশ ও জীবের মধ্যে একটা শৃঙ্খলা বা ঐক্য বিদ্যমান। ঈশ্বর জীবের শুধু স্রষ্টা নন।

 

গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

তিনি জীবের মধ্যে আত্মারূপে অবস্থান করেন। তাই জীবের শক্তি ও সৌন্দর্য ঈশ্বরেরই শক্তি ও সৌন্দর্য। ঈশ্বর তার সকল সৃষ্টির মধ্যে অবস্থান করেন। কবি রজনীকান্ত সেন এ সম্পর্কে বলেছেন:

“আছ অনল-অনিলে চির নভোনীলে

ভূধর-সলিল-গহনে ।

আছ বিটপি-লতায় জলদের গায়

শশীতারকায় তপনে।

ঈশ্বরের অস্তিত্বেই সকল কিছুর অস্তিত্ব। ঈশ্বরের সৌন্দর্যেই সকল কিছু সুন্দর । তাই ঈশ্বরের সৃষ্টিকে ভালবাসলে ঈশ্বরকেই ভালবাসা হয়। হিন্দু ধর্মে বলা হয়েছে, “যত্র জীবঃ তত্র শিবঃ”-

যেখানে জীব সেখানেই শিব বা ঈশ্বর। জীবের হৃদয়ে ঈশ্বরের অধিষ্ঠান। হিন্দু ধর্মের একটি প্রধান শিক্ষা হচ্ছে এই যে, জীবের ভিতরে ঈশ্বর আছেন, তাই জীবকে ঈশ্বর-জ্ঞানে সেবা করা একটি পবিত্র কর্তব্য। এই জ্ঞান থেকে আসে অহিংসা, আসে জীবের প্রতি ভালবাসা। কারণ জীব ঈশ্বরের প্রত্যক্ষ প্রকাশ। সুতরাং আমরা সকল জীবের সেবা করব।

জীব ও জগতের স্রষ্টা এবং সকল সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্যের স্রষ্টা, জীব ও জগতের নিয়ন্তা যে ঈশ্বর, সেই ঈশ্বরকে ভক্তি করব। হিন্দু ধর্মের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, নিজের মুক্তি বা আত্মমোক্ষ ও জগতের হিতসাধন। এই কথা স্মরণে রেখে আমরা জগতের হিতসাধনে সর্বদা সচেষ্ট থাকব।

সারাংশ

প্রকৃতি ও পরিবেশের মধ্যে, জীব ও জগতের মধ্যে যেমন বৈচিত্র্য রয়েছে, তেমনি আবার গভীর ঐক্যও রয়েছে। এই বৈচিত্র্য ও ঐক্য আপনা-আপনি ঘটেনি, এর মূলে একজন স্রষ্টা ও নিয়ন্তা রয়েছেন । সকল কিছুর এই স্রষ্টা ও নিয়ন্ত্রণকারীকে আমরা ঈশ্বর বলি ।

 

 

ঈশ্বর জীবের শুধু স্রষ্টা নন, তিনি জীবের মধ্যে আত্মারূপে অবস্থান করেন। ঈশ্বর জীবের আত্মারূপে অবস্থান করেন বলে, জীবের সেবা করলে ঈশ্বরের সেবা করা হয়। এর মধ্যে হিন্দু ধর্মের যে প্রধান বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত হয়, তা হচ্ছে, আত্মমোক্ষ অর্থাৎ নিজের মুক্তি ও জগতের হিতসাধন ।

আরও দেখুন :

Exit mobile version