আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় দেব-দেবীর পরিচয়
Table of Contents
দেব-দেবীর পরিচয়
দেব-দেবীর পরিচয়
ঈশ্বর এক ও অদ্বিতীয়। তাঁর কোন আকার নেই। তিনি নিরাকার। তবে তিনি যে কোন রূপ বা আকার ধারণ করতে পারেন। ঈশ্বরের ক্ষমতা সীমাহীন। সীমাহীন তাঁর গুণ। ঈশ্বর যখন নিজের কোন গুণ বা ক্ষমতাকে আকার দান করেন, তখন তাঁকে দেবতা বলে। যেমন- ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব, দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী প্রভৃতি দেব-দেবী। ঈশ্বর যে রূপে সৃষ্টি করেন তাঁর নাম ব্রহ্মা।
ঈশ্বরে যে রূপে পালন করেন তাঁকে বলে বিষ্ণু। সরস্বতী বিদ্যার দেবী। এরকম আরও অনেক দেব-দেবী আছেন। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, দেবতারা ঈশ্বর নন। ঈশ্বরও বহু নন। তিনি এক। দেবতারা এক ঈশ্বরের বিভিন্ন গুণ বা শক্তির প্রকাশ। ঋগবেদের একটি মন্ত্রে বলা হয়েছে, ‘একং সদ বিপ্রাঃ বহুধা বদন্তি ।’ অর্থাৎ এক, অখণ্ড ও চিরন্তন ব্রহ্মকে বিপ্রগণ বা জ্ঞানীরা বহু প্রকার নামে বর্ণনা করেছেন।
দেবতাদের বিভিন্ন গুণ বা ক্ষমতা লাভের জন্য তাঁদের পূজা করা হয়। পূজা করলে দেবতারা খুশি হন। মানুষ দেবতাদের কৃপা লাভ করে এবং সুখ ও শান্তি পায়। দেবতাদের পূজা করলে ঈশ্বরও সন্তুষ্ট হন । কোন কোন দেব-দেবীর পূজা প্রতিদিনই করা হয়। যেমন- বিষ্ণু, শিব, লক্ষ্মী প্রভৃতি। আবার বিশেষ বিশেষ তিথিতে কোন কোন দেব-দেবীর পূজা করা হয়। যেমন ব্রহ্মা, কার্তিক, সরস্বতী প্রভৃতি ।
আমাদের আদি ধর্মগ্রন্থ বেদের ওপর ভিত্তি করে ‘পুরাণ’ নামক ধর্মগ্রন্থসমূহ রচিত হয়েছে। বেদ ও পুরাণে বিভিন্ন দেব-দেবীর রূপ, শক্তি, প্রভাব, সামাজিক গুরুত্ব এবং পূজা-প্রণালী বর্ণনা করা হয়েছে। এছাড়া আরও কিছু দেবতা রয়েছেন, বেদ ও পুরাণে যাঁদের উল্লেখ নেই। কিন্তু ভক্তগণ যুগ-যুগ ধরে তাঁদের পূজা করে আসছেন। এভাবে আমরা তিন প্রকার দেবতার পরিচয় পাই। যথা- (ক) বৈদিক দেবতা, (খ) পৌরাণিক দেবতা এবং (গ) লৌকিক-দেবতা।

বৈদিক দেবতা
বেদে যে সকল দেবতার কথা বলা হয়েছে, তাঁদেরকে বৈদিক দেবতা বলা হয়। যেমন- অগ্নি, ইন্দ্ৰ, মিত্র, রুদ্র, ঊষা প্রভৃতি। বৈদিক দেবতাদের কোন বিগ্রহ বা মূর্তি ছিল না। তবে বৈদিক মন্ত্রে প্রতিটি দেবতার রূপ, গুণ ও ক্ষমতার বর্ণনা করা হয়েছে।
পৌরাণিক দেবতা
পুরাণে যে সকল দেবতার বর্ণনা করা হয়েছে, তাঁদেরকে বলা হয় পৌরাণিক দেবতা। যেমন- ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব, দুর্গা, সরস্বতী প্রভৃতি। পুরাণে কিছু কিছু বৈদিক দেবতাসহ আরো অনেক দেবতার বিগ্রহ বা মূর্তি ও মন্দির নির্মাণ করা হয়েছে। প্রচলিত হয়েছে দেবতাদের পূজা করার পদ্ধতি ও বিধিবিধান। যে সকল বৈদিক দেবতার উল্লেখ পুরাণেও আছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন- বিষ্ণু, সূর্য, অগ্নি, ইন্দ্র, বরুণ প্রভৃতি।
লৌকিক দেবতা
বেদে ও পুরাণে যে-সকল দেবতার কথা বলা হয় নি, কিন্তু ভক্তগণ তাঁদের পূজা করেন, তাঁদেরকে বলা হয় লৌকিক-দেবতা। যেমন, মনসা, শীতলা, দক্ষিণ রায় প্রভৃতি। পরবর্তীকালে মনসা দেবীসহ আরও অনেক লৌকিক-দেবতা পুরাণেও অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।
সারাংশ
ঈশ্বর এক, অদ্বিতীয় এবং নিরাকার। দেবতারা ঈশ্বরের বিশেষ বিশেষ গুণ বা ক্ষমতার সাকার রূপ। দেবতাদের পূজা করলে দেবতারা সন্তুষ্ট হন এবং তাঁদের বিশেষ বিশেষ গুণ ও ক্ষমতা অর্জন করা যায়। দেবতারা সন্তুষ্ট হলে ঈশ্বরও সন্তুষ্ট হন। বৈশিষ্ট্য ভেদে দেবতা তিন প্রকার- | বৈদিক, পৌরাণিক ও লৌকিক। অনেক বৈদিক দেবতার কথা পুরাণে বর্ণিত হয়েছে। অনেক লৌকিক দেবীও পুরাণে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।
আরও দেখুন :