আজ আমরা জানবো সত্যভামার তুলাব্রত সম্পর্কে ।
Table of Contents
সত্যভামার তুলাব্রত
সত্যভামার তুলাব্রত ১
শ্রীকৃষ্ণ তখন দ্বারকার রাজা ।
সত্যভামা তাঁর এক স্ত্রীর নাম।
দ্বারকা পুরীর অন্তঃপুরে সত্যভামা সোনার পালঙ্কে সখীদের নিয়ে বসে আছেন। জ্যোৎস্না রাত । মন্দার পুষ্পের সৌরভ উদ্যান থেকে ভেসে আসছে। প্রসাদকক্ষের একপাশে মনিময় দীপ জ্বলছে। ছড়াচ্ছে মৃদু আলো । এমন সময় সেখানে এলেন দেবর্ষি নারদ। দেবর্ষি নারদকে দেখে সত্যভামা তাঁকে প্রণাম করলেন। আপ্যায়নের ব্যবস্থা করলেন। মহার্ঘ আসনে বসলেন নারদ। তারপর সুমধুর কণ্ঠে সত্যভামাকে বললেন,
– সত্রাজিৎ-নন্দিনী, শ্রীকৃষ্ণ তোমাকে খুব ভালবাসেন। তুমি একটি ব্রত কর, যাতে তোমার প্রতি শ্রীকৃষ্ণের ভালবাসা আরও বৃদ্ধি পায়। নারদের এ কথায় আনন্দিত হলেন সত্যভামা। তিনি কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
– প্রভু, কি সে ব্রত? আর কেমন করে সেই ব্রতের অনুষ্ঠান করতে হয়, তার দক্ষিণা কি দিতে হবে, সবিস্তারে বর্ণনা করুন।
নারদ বললেন,
– দেবী, সে ব্রতের নাম তুলাব্রত। তেমন কোন বড় আয়োজনের ব্রত নয়। তুলাযন্ত্র অর্থাৎ দাঁড়িপাল্লার একদিকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, অন্যদিকের পাল্লায় তাঁর সমপরিমাণ ধনরত্ন দেবে। তারপর সেই ধনরত্ন দান করবে। প্রিয় বা আপন কাউকে তুলাযন্ত্রে বসিয়ে তার সমপরিমাণ ধনরত্ন দান করে যে ব্রত করা হয়, তাকে বলে তুলাব্রত। শিবের পত্নী গৌরী এবং ইন্দ্রের পত্নী শচীদেবী এ ব্রত করেছিলেন। আমিই তাঁদের ব্রতের পুরোহিত হয়েছিলাম।

– এতো সামান্য কথা। ধনরত্নের তো আর অভাব নেই। আমি এখনই সর্ব ব্যবস্থা করছি। এই বলে সত্যভামা তুলাযন্ত্র আনিয়ে অঙ্গনে স্থাপন করলেন। তারপর হাসতে হাসতে শ্রীকৃষ্ণকে ডেকে আনলেন এবং তুলাযন্ত্রের একদিকের পাল্লায় তাঁকে বসতে বললেন।
নারদের দিকে তাকিয়ে অর্থপূর্ণ হাসি হেসে লীলাময় শ্রীকৃষ্ণ তুলাযন্ত্রের এক পাল্লায় বসলেন। সত্যভামা অনুমান করে বেশ কিছু পরিমাণ ধনরত্ন তুলাযন্ত্রের অপর পাল্লায় রাখলেন । কিন্তু তাতে হল না। সত্যভামা নিজ অঙ্গ থেকে অলংকারগুলো খুলে চাপালেন যে পাল্লায় ধনরত্ন ছিল, সেই পাল্লায়। তবুও শ্রীকৃষ্ণের সমান ওজন হল না।
তখন উপস্থিত সকলের অলংকার ও ধনরত্ন দেওয়া হল। তাতেও হল না। আরও ধনরত্ন সংগ্রহ করে এনে পাল্লায় চাপান হল। তবুও শ্রীকৃষ্ণের পাল্লাই গুরুভার হয়ে রইল ।
– কি হল? নারদ বললেন – কৃষ্ণের সমপরিমাণ ধনরত্ন তো দিতে পারলে না, দেবী! লজ্জায় সত্যভামার চোখে জল এসে গেল। তিনি নির্বাক হয়ে শ্রীকৃষ্ণের মুখের দিক জলভরা চোখে তাকিয়ে রইলেন। সখীরাও সজল নয়নে তাকিয়ে রইল।
সারাংশ
শ্রীকৃষ্ণ তখন দ্বারকার রাজা। তাঁর এক স্ত্রীর নাম সত্যভামা। একদিন নারদ এসে সত্যভামাকে | সত্যভামার প্রতি শ্রীকৃষ্ণের প্রীতি যাতে আরও বৃদ্ধি পায়, তার জন্য তুলাব্রত করতে বললেন। সত্যভামা সানন্দে তুলাব্রত করতে রাজি হলেন। তিনি তুলাযন্ত্র স্থাপন করে তার পাল্লায় একদিকে শ্রীকৃষ্ণকে ডেকে এনে বসালেন। অন্যদিকে রাখলেন কিছু পরিমাণ ধনরত্ন।
কিন্তু তার ওজন শ্রীকৃষ্ণের সমান হল না। তখন সত্যভামা নিজের, অন্য সখীদের এবং আরও ধনরত্ন সংগ্রহ করে এনে পাল্লায় চাপালেন। কিছুতেই শ্রীকৃষ্ণের সমান ওজন হল না। লজ্জায় সত্যভামার চোখে জল এল। তিনি নির্বাক হয়ে জলভরা চোখে শ্রীকৃষ্ণের দিকে চেয়ে রইলেন।
আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় সত্য ভামার তুলব্রত ২
সত্য ভামার তুলব্রত ২
সত্য ভামার তুলব্রত ২
দেবর্ষি নারদের কথায় সত্যভামা অত্যন্ত লজ্জা পেলেন। তিনি লজ্জিত হয়ে কাঁদতে কাঁদতে শ্রীকৃষ্ণের অপর স্ত্রী রুক্মিনীর কাছে গেলেন। রুক্মিনী দেবীর কৃষ্ণভক্তি ছিল অসাধারণ। তিনি হেসে সত্যভামাকে বললেন,
– আমার ধনরত্ন যা আছে নিয়ে যাও। দেখ তাতে কাজ হয় কি না। সত্যভামা রুক্মিনী দেবীর কথায় আশ্বস্ত হয়ে তাঁর ধনরত্ন এনে তুলাযন্ত্রে চাপালেন। কিন্তু তাতেও কোন কাজ হল না। সত্যভামা যত ধনরত্ন এনে চাপান, শ্রীকৃষ্ণ ততই গুরুভার হয়ে থাকেন। সত্যভামা আবার রুক্মিনী দেবীর কাছে গেলেন। কাঁদতে কাঁদতে বললেন,
– তুমি একটা কিছু উপায় করে দাও। রুক্মিনী দেবী তখন সত্যভামার সঙ্গে অঙ্গনে এলেন। এসে দেখেন, তুলাযন্ত্রের পাল্লার একদিকে বিশ্বপতি ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। অন্যদিকে বিশাল ধনরত্নের স্তূপ। রুক্মিনী তখন বললেন,

– ধনরত্ন সব দূরে রাখ । শ্রীকৃষ্ণের সমান কি কোন ধনরত্ন হতে পারে? – তখন সত্যভামা তুলাযন্ত্রের পাল্লা দেখে ধনরত্ন নামিয়ে ফেললেন। রুক্মিনী দেবী কয়েকটি তুলসী পাতায় শ্রীকৃষ্ণের নাম লিখে তুলসী পাতাগুলো সেই পাল্লায় রাখলেন। তখন শ্রীকৃষ্ণের পাল্লা লঘু হয়ে উপরে উঠে গেল, আর গুরুভার হয়ে রইল শ্রীকৃষ্ণের নাম লেখা তুলসী পাতাগুলো ।
শ্রীকৃষ্ণ নামের কি অপূর্ব মাহাত্ম্য। সত্যভামা বুঝলেন, নামীর চেয়ে নাম মাহাত্ম্য অনেক বড়! শ্রীকৃষ্ণের চেয়ে তাঁর নামমাহাত্ম্যই প্রবল হল । ভক্তের জয় হল ।
‘যেই নাম সেই কৃষ্ণ ভক্ত নিষ্ঠা করি।
নামের সহিত আছেন আপনি শ্রীহরি’
সত্যভামা শ্রীকৃষ্ণের অপর স্ত্রী ভক্তিমতী রুক্মিনী দেবীর কাছে গেলেন। রুক্মিনী দেবী এসে কয়েকটি তুলসী পাতায় শ্রীকৃষ্ণের নাম লিখে পাল্লায় রাখলেন। এতে শ্রীকৃষ্ণের পাল্লা লঘু হয়ে | উপরে উঠে গেল, গুরুভার হয়ে নিচের দিকে নেমে রইল শ্রীকৃষ্ণ-নামাঙ্কিত তুলসী পাতার পাল্লা। সত্যভামা বুঝলেন, শ্রীকৃষ্ণের চেয়ে তাঁর নামের মাহাত্ম্য বেশি।