আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় দেশপ্রেম নীতিজ্ঞান
Table of Contents
দেশপ্রেম নীতিজ্ঞান
দেশপ্রেম নীতিজ্ঞান
‘দেশপ্রেম’ বলতে বোঝায় দেশের প্রতি ভালবাসা। যিনি দেশপ্রেমিক তিনি দেশের স্বার্থকে নিজের স্বার্থের ঊর্ধ্বে স্থান দেন। তিনি সবসময় দেশ ও দেশবাসীর কল্যাণের জন্য কাজ করে যান। দেশ যদি কখনও বহিঃশত্রুর দ্বারা আক্রান্ত হয়, তখন দেশপ্রেমিক দেশকে রক্ষার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েন। দেশের জন্য তিনি প্রাণ বিসর্জন দিতেও কুণ্ঠিত হন না । দেশপ্রেম ধর্মেরও অঙ্গ । ধর্মগ্রন্থে বলা হয়েছে –
‘জননীজন্মাভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরীয়সী’—অর্থাৎ মা ও মাতৃভূমি স্বর্গের চেয়েও বড়। দেশপ্রেমের আবেগে কবিও গেয়ে ওঠেন।
এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি,
সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি।’
দেশের জন্য কঠোর পরিশ্রম, দেশের সম্পদকে নিজের সম্পদের মত রক্ষা করা, যত্ন নেয়া এবং দেশের জন্য প্রয়োজনে আত্মত্যাগ করার মধ্য দিয়ে দেশপ্রেমের পরিচয় পাওয়া যায়। দেশের জন্য ধর্মযুদ্ধে যদি কেউ প্রাণ বিসর্জন দেন, তাহলে সেই দেশপ্রেমিক অক্ষয় স্বর্গ লাভ করেন। প্রাচীনকালেও অনেক মহান ব্যক্তি দেশপ্রেমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখেছেন। রামায়ণ থেকে এমনই এক দেশপ্রেমিকের উপাখ্যান নিম্নে বর্ণিত হল :
কার্তবীর্যার্জনের দেশপ্রেম
পুরাণে সূর্যবংশ ও চন্দ্রবংশ নামে দুটি বিখ্যাত রাজবংশের বিবরণ আছে। এ দুটি রাজবংশে অনেক ধর্মপ্রাণ ও দেশপ্রেমিক রাজার জন্ম হয়েছিল। একসময়ে চন্দ্রবংশে এমনি একজন দেশপ্রেমিক রাজা ছিলেন। নাম তাঁর কার্তবীর্যার্জুন। সহস্রবাহু ছিল তাঁর। তিনি ছিলেন মহাশক্তিধর। তখন যুদ্ধ ও রাজকার্যের ক্লান্তি দূর করার জন্যে মহারাজ কার্তবীর্যার্জন অবকাশ যাপন করছিলেন।
আর ঠিক সেই সময়ে লঙ্কার রাজা রাবণ কার্তবীর্যার্জুনের রাজ্য আক্রমণ করে বসলেন। তাঁর উদ্দেশ্য কার্তবীর্যার্জুনের রাজ্য অধিকার করে নেয়া। কার্তবীর্যার্জুন যেখানে অবকাশ যাপন করছিলেন, সেখানে দ্রুত সংবাদ পাঠানো হল। এদিকে সেনানায়করা রাবণের সাথে যুদ্ধ করে তাঁকে ঠেকিয়ে রাখছিলেন । সংবাদ পেয়ে কার্তবীর্যার্জুন ক্রোধে আগুনের তেজে জ্বলে উঠলেন।
আমার রাজ্য, আমার দেশ আক্রান্ত! আমি এখুনি যুদ্ধে যাত্রা করব। রাজা কার্তবীর্যার্জুন সকল সৈন্যকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে ফেললেন। পররাজ্য আক্রমণকারী সৈন্যরা তাদের কাছে হেরে গেল। রাবণ পরাজিত হয়ে বন্দি হলেন। স্বর্গেও এই বার্তা পৌঁছুল। রাবণ বন্দি হয়েছেন। মহামুনি পুলস্ত্য তখন স্বর্গে থাকেন। রাবণ সম্পর্কে তাঁর নাতি হয় ।
রাবণ বন্দি হয়েছে শুনে তিনিও খুব দুঃখ পেলেন। তিনি ভাবলেন, মর্ত্যে গিয়ে দেখি, রাবণকে মুক্ত করার কোন ব্যবস্থা করা যায় কিনা । তিনি তখনই স্বর্গ থেকে মর্ত্যে যাত্রা করলেন। নেমে এলেন কার্তবীর্যার্জুনের রাজসভায় । মহামুনি পুলস্ত্য এসেছেন। কার্তবীর্যার্জুন খুবই আনন্দিত হলেন। তিনি মহামুনি পুলস্ত্যকে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করলেন। পুলস্ত্য সন্তুষ্ট হলেন কার্তবীর্যার্জুনের শিষ্টাচারে । তিনি শান্ত কণ্ঠে বললেন,
– কার্তবীর্যার্জুন, তুমি ধার্মিক, দেশপ্রেমিক। তুমি তোমার গুণে দেবতাদেরও প্রিয়। জানই তো রাবণ সম্পর্কে আমার নাতি হয়। ওকে তুমি মুক্তি দিলে আমি খুশি হব ।
রাজা কার্তবীর্যার্জুন বিনয়ের সঙ্গে বলেন, আমার দেশপ্রেমিক সৈন্যরা পররাজ্য আক্রমণকারীকে পরাস্ত করেছেন।
– হ্যাঁ, তোমার দেশপ্রেম আর বীরত্বের কাছে রাবণ পরাজিত হয়েছে। পুলস্ত্য মুনি বললেন। কার্তবীর্যার্জুন বললেন,
– আপনি মহামুনি। পরম শ্রদ্ধার পাত্র। আপনি যখন বলছেন, তখন রাবণকে আমি মুক্তি দিয়ে ধন্য হতে চাই ।
রাজা কার্তবীর্যার্জুন লঙ্কারাজ রাবণকে মুক্তি দিলেন। পুলস্ত্য অগ্নি সাক্ষী করে কার্তবীর্যার্জুন আর রাবণের মধ্যে বন্ধুত্ব স্থাপন করে দিলেন। পুলস্ত্য স্বর্গলোকে চলে গেলেন। রাবণ ফিরে গেলেন নিজ রাজ্য লঙ্কায়। রাজা কার্তবীর্যার্জুন তাকিয়ে দেখলেন- রাজপুরীর প্রাচীর ছড়িয়ে দূরে প্রান্তরের শস্যশ্যামল শোভা। স্বাধীন স্বদেশের দিকে তাকিয়ে আবেগে কার্তবীর্যার্জুনের দুচোখে আনন্দাশ্রু দেখা দিল।
এই স্বদেশকে তিনি শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করতে পেরেছেন । আমার রাজ্য যেন চিরকাল স্বাধীন থাকে। – মনে মনে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলেন দেশপ্রেমিক রাজা কার্তবীর্যার্জুন।
সারাংশ
‘দেশপ্রেম’ মানে দেশের প্রতি ভালবাসা। রামায়ণে কার্তবীর্যার্জুন নামে এক দেশপ্রেমিক রাজা ছিলেন লংকার রাজা রাবণ তাঁর রাজ্য আক্রমণ করেন । তখন রাজা কার্তবীর্যার্জন অবকাশ যাপন করছিলেন। তিনি সংবাদ পেয়ে দ্রুত ছুটে এসে সৈন্য সহ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। যুদ্ধে কার্তবীর্যার্জুন ও তাঁর সৈন্যরা জয়লাভ করেন। রাবণ এবং তাঁর সেনাদলও মহাশক্তিধর।
কিন্তু রাবণ ও তাঁর সৈন্যরা যুদ্ধ করেছেন পররাজ্য | গ্রাস করার জন্যে। আর কার্তবীর্যার্জুন ও তাঁর সৈন্যরা যুদ্ধ করেন দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশকে শত্রুর হাত থেকে রক্ষার করার জন্য। দেশপ্রেমের কারণে কার্তবীর্যার্জুন ও তাঁর সৈন্যরা বিজয়ী হন ।
আরও দেখুন :