নরকের চরিত্র – কালিকা পুরাণ

উনচত্বারিংশ অধ্যায় – নরকের চরিত্রঃ মার্কণ্ডেয় বলিলেন, মনোহর শোভাশালী, দীর্ঘজীবী নরক, মনুষ্য-প্রথানুসারে বহুকাল রাজত্ব করিলেন। ১

তাহার পর ত্রেতা অতীত হইলে দ্বাপরের শেষভাগে, শোনিতপুরে বাণ নামক অসুর জন্মগ্রহণ করিল। ২

সে অত্যন্ত বলবান এবং শিবের মিত্র, তাহার অগ্নিনামক নগর। বলিপুত্র সেই মহাত্মা, প্রবল প্রতাপশালী হইল এবং নরক রাজার সহিত তাহার অত্যন্ত মিত্ৰতা হইল ও পরস্পরের প্রতি পরস্পরের বিশেষ অনুগ্রহ হইল এবং গমনাগমন হইতে লাগিল। ৩-৪

উভয়েই পবন ও অগ্নির ন্যায় প্রবল প্রতিপাশে বদ্ধ হইলেন। ৫

বাণ মহাদেবকে আরাধনা করিয়া অকুতোভয়ে, অসুরের ন্যায় বিচরণ করিতে লাগিল। ৬

হে দ্বিজগণ! বাণের অদ্ভুত কাৰ্য্য দেখিয়া এবং তাহার সংসর্গে নরকও সেই ভাব অবলম্বন করিলেন। ৭

নরকের চরিত্র - কালিকা পুরাণ

পূর্বের ন্যায় ব্রাহ্মণদিগকে আর পূজা করিতেন না এবং যজ্ঞ দানাদি ধর্ম কাৰ্যেও পূর্বের ন্যায় মনোযোগ করিতেন না। ৮

নরকের চরিত্র – কালিকা পুরাণ

বিষ্ণু ও পৃথিবীকেও পূৰ্বরূপ পূজা করিতেন না এবং কামাখ্যা দেবীর প্রতিও পুৰ্বরূপ ভক্তি করিতেন না। ৯

ইহার মধ্যে এক সময় ব্ৰহ্মনন্দন বসিষ্ঠ মুনি, কামাখ্যা দেবীকে দর্শন করিবার জন্য প্রাগজ্যোতিষপুরে গমন করিলেন। ১০

নীলকুট পৰ্ব্বতের দুর্গমধ্যে কামাখ্যা দেবীকে দর্শন করিবার জন্য নরক বসিষ্ট দেবকে প্রবেশ করিতে দিলেন না। ১১

তারপর বসিষ্ঠ মুনি কুপিত হইয়া কর্কশবাক্যে নরককে ভর্ৎসনা করিয়া বলিলেন, তুমি মহাতেজস্বী বরাহের ঔরসে পৃথিবীর গর্ভে জন্মগ্রহণ করিয়া, ব্রাহ্মণকে দেবতা-দর্শন করিতে দিতেছ না। ১১-১৩

হে ধরাত্মজ! এ কি তোমার কুলপ্রথামত কাৰ্য্য করিতেছ, দ্বারপ্রবেশ করিতে দাও, দেবী জগদম্বাকে অর্চনা করি। ১৪

তাহার পর পৃথিবীপুত্ৰ-নরক কর্কশবাক্যে মুনিকে ভর্ৎসনা করত তাহা হইতে নিরস্ত করিলেন। ১৫

তৎপরে মুনি কুপিত হইয়া নরককে শাপ দিলেন, পাপিষ্ঠ। বরাহপুত্র। তুই যাহার ঔরসে জন্মিয়াছিস, মনুষ্যরূপ ধারণ করিয়া সেই মহাত্মা অচিরাৎ তোকে বিনাশ করিবেন। ১৬

পাপাত্মা। তোর মৃত্যু হইলে তাহার পর জগন্মাতা কামাখ্যা দেবীকে পূজা করিব, থাক, আমি নিজ স্থানে যাইতেছি। ১৭

পাপিষ্ঠ। তুই যতদিন জীবিত থাকিবি, ততদিন জগজ্জননী কামাখ্যা সমস্ত পরিবারের সহিত অন্তর্ধান হউন। ১৮

মার্কণ্ডেয় বলিলেন,–এই কথা বলিয়া ব্ৰহ্ম-নন্দন বসিষ্ঠ মুনি নরকের কর্কশ বাক্যে অত্যন্ত কুপিত হইয়া স্বস্থানে গমন করিলেন। ১৯

মুনির গমনের পর নরক বিস্মিত হইয়া নীলকূট গিরির গুহাভ্যন্তরে কামাখ্যা দেবীর মন্দিরে গমন করিলেন। ২০

মন্দিরে যাইয়া কামরূপেশ্বরী কামাখ্যাকে দেখিতে পাইলেন না এবং তাহার যোনিমণ্ডল ও সমস্ত পরিজন কিছুই দেখিলেন না। ২১

তাহার পর নরক বিমর্ষ হইয়া মাতা বসুন্ধরাকে এবং পিতা জগৎকর্তা নারায়ণকে স্মরণ করিলেন। ২২

নরকের চরিত্র - কালিকা পুরাণ

হে দ্বিজগণ। কিন্তু বসুধা ও বি-ষ্ণু, নীতিমার্গ পরিত্যাগ করাতে এবং নিয়মের অপ্রতিপালনে নরককে প্রত্যক্ষভাবে দেখা দিলেন না। ২৩

বজ্রধ্বজ নরক বসুন্ধরা ও বি-ষ্ণুর দর্শন অভিলাষে অনেক সময় প্রতীক্ষা করিয়াও দেখিতে পাইলেন না। ২৪

তাহাদের দর্শন না পাইয়া নিজগৃহে ফিরিয়া গেলেন এবং ঋতুমতী স্ত্রীর ন্যায় স্বকীয় পুরী শোভাশূন্য হইয়াছে দেখিলেন। ২৫

দেবী অন্তর্হিত হওয়াতে সেই পুরীস্থিত মনুষ্যগণ পূৰ্বরূপ বেদবাক্য উচ্চারণ করিত না এবং পুণ্যকার্যেও বিশেষ যত্ন করিত না। ২৬

দেবগণ মনুষ্যগণ ও মহর্ষিগণ কেহই নরকভবনে যাইতেন না। সেই নগর যজ্ঞক্রিয়া এবং উৎসবাদিশূন্য হইল। ২৭

রাজ্যে বিপ্লব উপস্থিত হইয়া বহুলোক বিনাশপ্রাপ্ত হইল; লৌহিত্যনামক নদের জলও শুষ্কপ্রায় হইল। ২৮

নরক সে সময়ে রাজ্যে এইরূপ বিপরীতভাব দেখিয়া বিবেচনা করিলেন, ব্ৰহ্মশাপে মরণ অতি নিকটে আগমন করিয়াছে। ২৯

এই ভাবিয়া প্রাগজ্যোতিষপতি নরক, শোকে অধীর হইলেন এবং মনে মনে চিন্তা করিয়া বলিপুত্র বাণের নিকট গমন করিলেন। ৩০

বাণ, নরকের প্রাণসম বন্ধু, কোন বিপদে পতিত হইলে স্বৰ্গবৈদ্য অশ্বিনী কুমারের ন্যায় উভয়ে উভয়কেই রক্ষা করিয়া থাকেন। ৩১

বজ্রকেতু নরক স্থির করিলেন, এ সময়ে শম্ভুসখা, মি-ত্র বাণ অনুকূল মন্ত্রণা প্রদানে প্রাজ্ঞ। ৩২।

এই প্রকার স্থিরবুদ্ধি করিয়া বাণনগরে দূত প্রদান করিলেন। ৩৩

দূত; দ্রুতগামী রথে আরোহণ করিয়া শোণিতপুরে গমন করিল; তাহার পর বাণকে নরকের সমস্ত বৃত্তান্ত বলি। ৩৪

যেরূপে বসিষ্ঠ শাপ দিয়াছেন, যেরূপে কামাখ্যা অন্তৰ্হিতা হইয়াছেন এবং যেরূপে প্ৰাগজ্যোতিষপুরে নানারূপ বিঘ্ন হইতেছে, যেরূপে নিয়মের ভঙ্গ হওয়াতে ক্ষিতি ও বি-ষ্ণু স্মরণ করিলেও আগমন করেন নাই, নরক-দূত সমস্তই বলিপুত্র বাণকে বলিল। ৩৫-৩৬

বাণ মি-ত্রের দৈব-পরাভব শ্রবণ করিয়া, নরককে প্রতিকারবিষয়ে উপদেশ দিবার জন্য, কাঞ্চনময় বিচিত্রাঙ্গ তিনশত অশ্বযুক্ত, লৌহময় চক্র, ব্যাঘ্র ও ময়ূর ধ্বজে ভূষিত, সুবর্ণ দণ্ড ধবল ছত্র-যুক্ত, কিঙ্কিণী আচ্ছাদিত এবং নানারত্নখচিত রথে আরোহণ করিলেন। ৩৭-৩৯

সহস্র-বাহুশোভিত বাণ, চতুরঙ্গ সৈন্যসমভিব্যাহারে প্রাগজ্যোতিষ নামক নরকভবনে উপস্থিত হইলেন। ৪০

নরকের চরিত্র - কালিকা পুরাণ

বাণ, প্রাগজ্যোতিষেশ্বর নরকের সমীপবর্তী হইয়া তাহার পূৰ্বের সেরূপ শোভা নাই দেখিতে পাইলেন। ৪১

বাণ তাহার যথাযোগ্য সৎকারে সৎকৃত হইলেন এবং জিজ্ঞাসা করিলেন; আপনার পুরী শোভাহীন হইয়াছে কেন? ৪২

আপনার শরীরেরও পূর্বের ন্যায় শোভা নাই ও মনও নিতান্ত অসন্তুষ্ট দেখিতেছি, ইহার কারণ কি আমাকে বলুন। ৪৩

বাণ এই প্রকার জিজ্ঞাসা করিলে, ক্ষিতি-কুমার নরক, বষিষ্ঠ মুনির শাপ অবধি সমস্ত বৃত্তান্ত বলিলেন। ৪৪

বাণ যাহা নরকের নিকট শুনিলেন, দূত সে সমস্তই পূর্বে বলিয়াহে। বাণ, সমস্ত বিষয় অবগত হইয়া বজ্রধ্বজ নরককে বলিলেন। ৪৫

এবিষয়ে শোক করা আপনার উচিত নহে,শরীরি-মাত্রেরই সুখ-দুঃখ চক্রের স্যায় পরিবর্তিত হয়, কিন্তু কাহাকেও পরিত্যাগ করে না। ৪৬

দুঃখ উপস্থিত হইলে ধীর ব্যক্তিদের প্রতিকার করাই কৰ্তব্য; সেই প্রতিকারই মঙ্গলজনক হয়, আপনিও সম্প্রতি প্রতিকার বিষয়ে যত্নবান হউন। ৪৭

এই পৃথিবীতে মনুষ্য দানব অথবা অসুর রাক্ষস কিন্নর-ইহার মধ্যে যে কেহ অসাধারণ ঐশ্বর্যশালী হইবেন, ইন্দ্রের তাহা কিছুতেই সহ্য হইবে না। ৪৮-৪৯

দেবগণের সহিত কুটিলতা করিয়া যে প্রকারেই হউক, তাহাকে শ্রীভ্রষ্ট করিবে। ৫০

তাহার মনোমত দেবতা নিত্য সনাতন বি-ষ্ণু; তিনি ইন্দ্রের সামান্য অনিষ্টও করিবেন না। ৫১

ইন্দ্রের অনিষ্ট করিব বলিয়া যে ব্যক্তি বি-ষ্ণুর আরাধনা করে, বি-ষ্ণু তাহাকে কৌশলে অনিষ্ট বরদান করিয়া বিনাশ করেন। ৫২

অনেককাল আরাধনা করিলে বি-ষ্ণু অভিলষিত বিষয় দান করেন এবং অত্যন্ত কায়ক্লেশে পূজা করিলে প্রসন্নভাব অবলম্বন করেন। ৫৩

ইষ্টদেবের আরাধনা ব্যতীত, কোন ব্যক্তি অতুল ঐশ্বৰ্য্য পাইয়াছে এবং বর্তমান সময়ে পাইতেছে? ৫৪

আপনি পূর্বে ব্রহ্মা ও বি-ষ্ণুর আরাধনা করিতেন না, এজন্য আপনার রাজ্যে নানারূপ বিঘ্ন উৎপন্ন হইতেছে। ৫৫

যে বি-ষ্ণু আপনার পালক তাহার স্বভাবত কাহারও প্রতি অনুগ্রহ হয় না; কিন্তু বি-ষ্ণুকে ক্ষিতির বাক্যানুসারে নিরন্তর আরাধনা করিয়াছেন। ৫৬

সেই বি-ষ্ণুই আপনাকে সচ্ছিদ্র বর দান করিয়াছেন; বসিষ্ঠের কোন অপরাধ আছে বলিয়া স্থির করিবেন না। ৫৭

আপনি ইহার অন্যথা আচরণ করিলে হতশ্রী হইবেন। ৫৮

বসিষ্ঠের প্রতি অপরাধ আরোপ করিবেন না, আপনি স্মরণ করিলেও ক্ষিতি ও মাধব আগমন করিলেন না। ৫৯

অতএব মি-ত্র! ইহা হরির বুদ্ধির কুটিলতাই স্থির করুন। ৬০

এসময়ে আপনার উদাসীনভাবে থাকা ভাল নহে, ‘বি-ষ্ণু আমার পিতা’ এইরূপ আপনার মনের বিশ্বাস। ৬১

কিন্তু বরাহই আপনার পিতা, তিনি লোকান্তর প্রাপ্ত হইয়াছেন। বরাহ হরির অংশ, এইরূপ আপনি শ্রবণ করিয়াছেন। ৬২

কিন্তু তাহার অংশ এই কথা কে কোথায় বলিয়া থাকে বলুন? তাহা হইলে আপনি–শিব অথবা ব্রহ্মার অর্চনা করুন। ৬৩

তাহারা প্রসন্ন হইলে অভিলষিত বিষয় দান করিবেন; বিঘ্নই হউক অথবা মুনিশাপ হউক, কিংবা পীড়াদায়ক যে কোনরূপই হউক, ব্ৰহ্মা কিংবা শিব প্রসন্ন হইলে সমস্তই বিনাশ প্রাপ্ত হইবে। ৬৪-৬৫

মার্কণ্ডেয় বলিলেন,–ভূমি-পুত্র নরক বাণের বাক্যে অত্যন্ত প্রীত হইয়া তাহাকে বলিলেন। ৬৬

মিত্রবৎসল! বাণ! আপনি যাহা বলিলেন, সেই আরাধনা করা আমার শীঘ্রই কর্তব্য। ৬৭

বি-ষ্ণু আমার আরাধনীয় নহেন। তাহার কারণ পূর্বেই আপনি বলিয়াছেন, কিন্তু শম্ভূও আমার আরাধনীয় নহেন; কারণ তিনি আমার পুরমধ্যে গুপ্তভাবে আছেন। ৬৮

তাহা হইলে মি-ত্র! আপনার বাক্যানুসারে ব্রহ্মা আমার আরাধনীয়। অতএব মি-ত্র সেই ব্রহ্মার পুত্র। লৌহিত্যনদের জলসমীপে তাহার উপাসনা করিব। ৬৯

হে মি-ত্র! গুরু যেমন শিষ্যকে উপদেশ দেন, সেইরূপ আপনার উত্তমরীতি অনুসারে সান্ত্বনাবাক্যে উপদিষ্ট হইয়াছি। ৭০

মার্কণ্ডেয় বলিলেন,–বজ্রধ্বজ মি-ত্রবৎসল নরক এই কথা বলিয়া বাণকে যথাযোগ্য সৎকার করিলেন। ৭১

তাহার পর বলিপুত্র সৎকৃত হইয়া স্বীয় নগরে গমন করিলেন। ক্ষিতিপুত্র অব্যগ্রচিত্তে ব্রহ্মার উপাসনা করিতে ইচ্ছা করিলেন। ৭২

তাহার পর মহাত্মা নদরাজ লৌহিত্যের তীরে ব্রহ্মার আরাধনাদি তপস্যার জন্য উপস্থিত হইলেন। ৭৩

একশত বৎসর পর্যন্ত মনুষ্যের প্রথানুসারে জলাহাররূপ ব্ৰতাচরণ করিয়া ব্ৰহ্মাকে অর্চনা করিলেন। ৭৪

লোক-পিতামহ ব্রহ্মা একশত বৎসরের পর সন্তুষ্ট হইয়া, প্রত্যক্ষভাবে নরকের সম্মুখে উপস্থিত হইলেন। ৭৫

“হে সুব্রত। তোমার উপাসনায় প্রীত হইয়াছি, তোমাকে বরদান করিব, তুমি বর প্রার্থনা কর” কমলাসন, নরককে এই কথা বলিলেন। ৭৬

তাহার পর নরক সৰ্বলোকেশ্বর কমলাসনকে প্রত্যক্ষভাবে দর্শন করিয়া এবং বিনয়-নম্র মস্তকে কৃতাঞ্জলি-পুটে প্রণাম করত বলিলেন। ৭৭

হে সুরজ্যেষ্ঠ! দেব অসুর রাক্ষস এবং সকল দেবযোনি ইহাদের সকলের অবধ্য হই, প্রথম এই বর দান করুন। ৭৮

যে পৰ্যন্ত চন্দ্র সূৰ্য্য জগতে প্রকাশিত থাকিবে, ততদিন পর্যন্ত আমার সন্তান-পরম্পরা অবিচ্ছিন্নভাবে জগতে অবস্থান করুক, দ্বিতীয়তঃ এই বর প্রদান করুন। ৭৯

এবং তিলোত্তমাদির যে সমস্ত রূপ ও গুণ আছে, সেই সমস্ত রূপ ও গুণ সম্পন্ন ষোড়শসহস্র স্ত্রী হইবে, তৃতীয়তঃ এই বর প্রদান করুন। ৮০

সকলের অজেয় এবং শ্ৰীসম্পন্ন হইয়া সৰ্ব্বদা ঐশ্বর্যের অপরিত্যক্ত হইব, হে পিতামহ! অদ্য এই পাঁচটি বর আমি প্রার্থনা করি। ৮১

মার্কণ্ডেয় বলিলেন, ভূমি-পুত্র মায়ায় মোহিত হইয়া এবং মুনি-শাপ বিস্মৃত হইয়া অন্য বর প্রার্থনা করিলেন, কিন্তু মুনিশাপ বর্তমান রহিল। ৮২

তুমি যাহা প্রার্থনা করলে, সে সমস্তই তোমার সিদ্ধ হইবে; পিতামহ, নরককে এইরূপ বর দান করিয়া বলিলেন, দ্বাপরের শেষ ভাগে তিলোত্তমাদির ন্যায় রূপবতী সুরকন্যাগণ জন্ম গ্রহণ করিবে, যতদিন নারদ তোমার বজ্রধ্বজ পুরে গমন না করেন, ততদিন হে ক্ষিতিপুত্র! তাহাদের সহিত সম্ভোগাদি করিও না। ৮৩-৮৪

এই কথা বলিয়া সৰ্ব্বলোকেশ্বর ব্রহ্মা অন্তর্হিত হইলেন। নরক, পরম আনন্দ লাভ করিয়া নিজ মন্দিরে গমন করিলেন। ৮৫

তাহার পর স্বকীয় নগর–আনন্দিত লোক সকলে অধিষ্ঠিত, লক্ষ্মীযুক্ত, সদা উৎসাহসম্পন্ন, বিপ্লববর্জিত দেখিলেন এবং পশু, শস্য, অশ্ব, হস্তী ইত্যাদিতে নগর পরিপূর্ণ হইল, নগর পুনরায় দেবরাজের অমরাবতীর ন্যায় হইল। ৮৬-৮৭

নরকের তপস্যা শেষ হইয়া বর লাভ হইয়াছে শুনিয়া বাণ সেই সময়ে স্বয়ং বজ্রধ্বজ নরকের সমীপে গমন করিলেন এবং ভৌমনগর প্রাগজ্যোতিষ পুরীতে উপস্থিত হইয়া মি-ত্র নরককে তপস্যার বিবরণ জিজ্ঞাসা করিলেন;– কোথায় আপনি তপস্যা করিয়াছেন? কিরূপে ব্রত প্রতিপালন করিয়াছেন? কিরূপ বর লাভ করিয়াছেন? তৎসমস্ত আমাকে বলুন। ৮৮-৯০

আপনার নগর আনন্দপূর্ণ এবং জনসমাজও অত্যন্ত প্রফুল্ল, অশ্ব-হস্তি-পূর্ণ এবং মঙ্গলধ্বনিযুক্ত, নানাবিধ শস্য পরিপূর্ণ, ব্যাধিশূন্য। ৯১

আপনি উত্তমরূপে পালন করিতেছেন দেখিতে পাইয়া সন্তোষ লাভ করিলাম। আপনি বলুন, কিরূপে ব্রহ্মা হইতে বর লাভ করিলেন? ৯২

ভৌম বলিলেন;–ব্ৰহ্মা স্বয়ং পৰ্বতরূপ ধারণ করিয়া কামেশ্বরীকে ধারণ করিবার জন্য এখানে অবতীর্ণ হইয়াছিলেন; যতক্ষণ বসিষ্ঠ আমাকে শাপ দেন নাই ততক্ষণ কামাখ্যাধারণে স্বয়ং যত্ন করিয়াছিলেন। ৯৩

হে বলিপুত্র! ব্রহ্মা আমার পুরে এই শ্ৰেষ্ঠ পৰ্ব্বতে দেবকুল-সেব্য হইয়াও বিরাজ করিতেছেন। তাহার পর আমি বারিভক্ষণ করিয়া একশত বৎসর তপস্যা করিলাম। ৯৪

তখন বায়ু-সেব্য, মনোহর এবং প্রাণীদিগের সুখকর লৌহিত্যতীরে তপস্যাতে রত হইবার পর, এক শত বৎসর এক বৎসরের ন্যায় অতীত হইল। ৯৫

তৎপরে চতুরানন সন্তুষ্ট হইয়া প্রত্যক্ষভাবে আমার সমক্ষে আগমন করত হিতবাক্য বলিলেন। তোমার প্রতি প্রসন্ন হইয়াছি, ঈপ্সিত বর গ্রহণ কর। ৯৬

সুরাসুর এবং দেবযোনিমাত্রের অবধ্যতা, অবিচ্ছিন্ন সন্তান, পরের অজেয়তা, অখণ্ড ঐশ্বর্যের আধিপত্য, উত্তমরূপ-সম্পন্ন স্ত্রীগণের পতিত্ব, এই পাঁচটী বর আমি প্রার্থনা করিলাম, তিনিও তাহা দিয়া নিজমন্দিরে গমন করিলেন৷ ৯৭-৯৮

তাহার পর আমি হৃষ্টান্তঃকরণে নিজপুরে আগমন করিয়া সৎকাৰ্য-বহুল মন্ত্রিগণের সহিত সমস্ত পুরাতন বন্ধুবান্ধবদিগকে দান এবং মান্য ব্যক্তির সন্তোষ সাধন করিলাম। ৯৯

মার্কণ্ডেয় বলিলেন,–বলিপুত্র নরকের বাক্য শ্রবণ করিয়া তত সন্তুষ্ট হইলেন না; এবং নরককে সেই সময়ের উপযুক্ত বাক্য বলিলেন, মনোমত বাক্যও বলিলেন না। ১০০

তাহার পর কহিলেন, মিত্র! তোমার মতি ব্ৰক্ষার সমক্ষে বশিষ্ঠ-শাপ অতিক্রম করিতে সক্ষম হয় নাই; হে ক্ষিতিপুত্র! তোমার মঙ্গল কিরূপে হইবে? অবশ্যম্ভাবী যে কাৰ্য সেটী নিত্য। ১০১

কৃত দৈবকার্য পুনৰ্বার করা যায় না; অবশ্যম্ভাবী কাৰ্য্য নিশ্চয়ই হইবে, তাহা ব্রহ্মাও প্রতিরোধ করিতে পারেন না। ১০২

অতএব মহাবীর পাবকসদৃশ অসুরদিগকে সচিবের পদে নিযুক্ত করুন, দেবতাদিগেরও দুর্জেয় বীরদিগকে দ্বারীর পদে নিযুক্ত করুন। ১০৩

যদি দেবেশ্বরকে অতিক্রম করিয়া আপনি বর লাভ করিয়া থাকেন, যে বর ব্রহ্মা আপনাকে দিয়াছেন, তাহা পরীক্ষা করুন এবং নিজ পুরে অবস্থিতি করিয়া জায়াগর্ভে পুত্রোৎপাদন করুন। ১০৪-১০৫

বাণ, এই কথা বলিয়া যথানিয়মে সৎকৃত হইয়া গমন করিলেন, নরকও মিত্র-বচন প্রতিপালন করিতে উপক্ৰম করিলেন। ১০৬

উনচত্বারিংশ অধ্যায় সমাপ্ত। ৩৯

আরও পরুনঃ 

দৈনন্দিন প্রলয় কথন – কালিকা পুরাণ

কালিকা পুরাণ

Leave a Comment