পাণিনির রুদ্র সাধনা – ভবিষ্য পুরাণ – পৃথ্বীরাজ সেন

পাণিনির রুদ্র সাধনাঃ একদিন শৌনকাদি মুনিগণ মহামুনি লোমহর্ষণকে জিজ্ঞাসা করলেন –যে, আপনি হচ্ছেন মহাজ্ঞানী, আপনি ত্রিকালদর্শী ব্যাসদেবের শিষ্য, কোনো কিছুই আপনার অজানা নেই। তাহলে বলুন, পৃথিবীর মধ্যে শ্রেষ্ঠ তীর্থ কোনটি?

লোমহর্ষণ বললেন–সত্যি কথা যে, পৃথিবীতে তীর্থক্ষেত্রের কোনো অভাব নেই। কিন্তু কোনোটি সেরা তীর্থক্ষেত্র সে বিচার করা খুবই কঠিন। এ বিষয়ে একটি কাহিনি আপনাদের বলব, মন দিয়ে শুনুন।

সমান ঋষির ছেলে পাণিনি অল্প বয়সেই সকল শাস্ত্রে পণ্ডিত হয়ে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছিলেন। বিদেশ থেকে আসা এক পণ্ডিত দিগ্বিজয়ে বেরিয়েছেন।

পাণিনির রুদ্র সাধনা - ভবিষ্য পুরাণ - পৃথ্বীরাজ সেন

পাণিনির রুদ্র সাধনা – ভবিষ্য পুরাণ – পৃথ্বীরাজ সেন

বিভিন্ন দেশ ঘুরে পাণিনির গ্রামে এসে লোকমুখে পাণিনির পাণ্ডিত্যের কথা শুনলেন। তাঁকে তর্কযুদ্ধে আহ্বান করলেন। শুরু হল তর্কযুদ্ধ।

উভয় উভয়কে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করতে থাকলেন। তারপর পাণিনি সেই বিদেশী পণ্ডিতের কাছে হার স্বীকার করতে বাধ্য হলেন।

পাণিনির রুদ্র সাধনা - ভবিষ্য পুরাণ - পৃথ্বীরাজ সেন

যাঁকে এতদিন দেশের লোক সর্বশ্রেষ্ঠ পণ্ডিত বলে জানত, তিনি কিনা আজ পরাস্ত। লজ্জায় তিনি দেশ ছেড়ে তীর্থে তীর্থে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন। অবশেষে তিনি কেদার তীর্থে এসে পৌঁছোলেন। কেদারনাথের মন্দির দেখে এবং স্থানটি দেখে পাণিনির খুব ভালো লাগল।

পাণিনি স্থির করলেন, আর কোথাও না গিয়ে এখানে বসেই তিনি শিবের আরাধনা করবেন। প্রথম কয়দিন গাছের শুকনো পাতা, তারপর শুধু জল খেয়ে কাটালেন। এরপর সম্পূর্ণ অনাহারে তিনি কঠোর তপস্যায় মগ্ন হলেন।

এইভাবে একমাস কেটে গেল। রুদ্রদেবের আসন নড়ে উঠল, তিনি ভক্তকে দর্শন না দিয়ে আর থাকতে পারলেন না। পাণিনির সম্মুখে আবির্ভূত হয়ে বললেন–তোমার তপস্যায় আমি প্রসন্ন।

পাণিনির রুদ্র সাধনা - ভবিষ্য পুরাণ - পৃথ্বীরাজ সেন

কিসের জন্য এমন কঠোর তপস্যা করছ? আমাকে বল, আমি নিশ্চয়ই তোমার মনস্কামনা পূর্ণ করব।

মহাদেবের মনোহর মূর্তি দেখে পাণিনি আনন্দে শিবের স্তব স্তুতি করে বললেন–হে মহেশ্বর, আপনি যদি আমার প্রতি প্রসন্ন হয়ে থাকেন, যদি আমার মনস্কামনা পূর্ণ করতে চান, তাহলে আমাকে এই বর দিন, আমি যেন পৃথিবীর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ তীর্থ লাভ করি।

পাণিনির প্রার্থনায় মহাদেব বললেন–পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ তীর্থ মানস তীর্থ। অবশ্যই তুমি সে তীর্থ লাভ করবে। মানস তীর্থের জল হল জ্ঞান।

নির্মল জ্ঞান লাভ করলে মানুষের মন থেকে রাগ, ভয়, হিংসা সব দূর হয়ে যাবে। যাও পাণিনি কাল বিলম্ব করো না, আমার প্রসাদে তুমি মানসতীর্থ লাভ করবে। অবশ্যই সিদ্ধিলাভ করবে।

পাণিনির রুদ্র সাধনা - ভবিষ্য পুরাণ - পৃথ্বীরাজ সেন

এই কথা বলে শিব অন্তর্হিত হলেন। আপন গৃহে ফিরে নিত্য মানসতীর্থে স্নান করে পাণিনি নির্মল জ্ঞান লাভ করলেন। জ্ঞানের আলোকে মন ভরে উঠল।

তারপর একের পর এক জ্ঞানগর্ভ গ্রন্থ রচনা করতে লাগলেন। সূত্রপাঠ, গণপাঠ, লিঙ্গসূত্র, ধাতুপাঠ প্রভৃতি। এই সব গ্রন্থের মাধ্যমে তিনি আজও অমর হয়ে আছেন।

আরও পড়ুনঃ

বায়ু পুরাণ ৫১-৬০ – বায়ু পুরাণ – পৃথ্বীরাজ সেন

ভবিষ্যপুরাণ

Leave a Comment