আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় লক্ষ্মী সরস্বতী
Table of Contents
লক্ষ্মী সরস্বতী
সরস্বতীর পরিচয়
ঈশ্বর যে দেবতারূপে নিজের জ্ঞানকে প্রকাশ করেন, তাঁর নাম দেবী সরস্বতী। সরস্বতী বিদ্যার দেবী। বেদে সরস্বতী দেবীর উল্লেখ আছে। সেখানে তিনি নদী-স্বরূপা। পুরাণে সরস্বতী দেবীর বিস্তৃত বর্ণনা আছে। সরস্বতী সঙ্গীত, নাট্যকলা, নৃত্যকলা, চিত্রকলা, ভাস্কর্য প্রভৃতি সকল প্রকার সৃষ্টিশীল বা সুকুমার শিল্প এবং জ্ঞান ও বিজ্ঞানের দেবী। তিনি আমাদের সকল প্রকার জ্ঞান দান করেন।
সরস্বতীর রূপ
সরস্বতী দেবীর গায়ের রং শুক্ল বা শুভ্র অর্থাৎ সাদা। চন্দ্রের মত শোভা তাঁর। শুরু তাঁর বসন। সরস্বতী শুক্ল পদ্মের ওপর বসে থাকেন। তাঁর হাতে পুস্তক ও বীণা। বীণা হাতে থাকে বলে সরস্বতী দেবীর আরেক নাম বীণাপাণি । তাঁর বাহন শ্বেতহংস। অর্থাৎ সাদা রঙের হাঁস ।
সরস্বতী পূজার সময়
মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে সরস্বতী দেবীর পূজা করা হয়। এ পঞ্চমী তিথিটিকে শ্রীপঞ্চমী তিথি বলা হয়। দুর্গা পূজার সাথে সরস্বতীর পূজাও করা হয় ।
সরস্বতীর মাহাত্ম্য
বেদে সরস্বতী জ্যোতিস্বরূপ। নদী-দেবীরূপেও বেদে সরস্বতীর উল্লেখ আছে। পুরাণে সরস্বতী বাগদেবী ও বিদ্যার অধিষ্ঠাত্রী দেবীরূপে বর্ণিত। সরস্বতী বিশেষভাবে শিক্ষার্থীদের দেবী। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে পূজারী শিক্ষার্থীরা সাড়ম্বরে সরস্বতীপূজা করে থাকে ।
শিল্পকলার দেবীরূপে সরস্বতী কবি, সাহিত্যিক, গায়ক, অভিনেতা, নৃত্য শিল্পীসহ কলাকারদের দ্বারা গভীর শ্রদ্ধার সাথে পূজিত হন। সরস্বতীর গায়ের রং থেকে বসন, আসন, এমনকি তাঁর বাহন হাঁসটিও শুক্ল অর্থাৎ সাদা। তাই সরস্বতী দেবীকে সর্বশুক্লা বলা হয়। শুক্ল বর্ণ সুচিতা ও পবিত্রতার প্রতীক। যে জ্ঞান অর্জন করতে চায় তাকেও হতে হয় মনে-প্রাণে শুদ্ধ ও পবিত্র।
নইলে সত্যিকারের জ্ঞান অর্জন করা যায় না। সরস্বতীর বাহন সাদা হাঁসটিরও তাৎপর্য আছে। জল আর দুধ মিশিয়ে দিলে হাঁস দুধ গ্রহণ করে জল ত্যাগ করে। জ্ঞানীও তেমনি নিজের জ্ঞানের জগৎ থেকে অসার বস্তু বাদ দিয়ে সার বস্তু গ্রহণ করেন। সরস্বতী দেবীকে বলা হয়েছে, ‘জাড্যাপহা’। ‘জাড্য’ মানে জড়তা। এখানে জাড্য মানে মূর্খতা। অপহা মানে বিনাশকারিণী।
সরস্বতী দেবী আমাদের মূর্খতা দূর করে আমাদের মন জ্ঞানের আলোকে আলোকিত করেন। এখানে পুরাণে সরস্বতী দেবীর কৃতিত্ব ও মাহাত্ম্যের অনেক কাহিনী আছে। এমন অনেক উপাখ্যান আছে যেখানে দেখা যায়, অনেকেই প্রথমে মূর্খ ছিলেন, পরে দেবী সরস্বতীর কৃপা লাভ করে জ্ঞানী বা শিল্পী-সাহিত্যিক হিসেবে বিখ্যাত হয়েছেন।
সারাংশ
ঈশ্বর যে দেবীরূপে জ্ঞান দান করেন তাঁর নাম সরস্বতী। বেদে ও পুরাণে সরস্বতী দেবীর বর্ণনা আছে। সরস্বতী দেবী শুক্লবর্ণা, শুক্লবসনা, শুক্লপদ্মাসনা। তাঁর বাহন হাঁসটিও সাদা রঙের। তাঁর হাতে থাকে বীণা ও পুস্তক।
বীণা হাতে থাকে বলে তাঁর নাম বীণাপাণি । মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে সরস্বতীর পূজা করা হয়। বেদে সরস্বতী জ্যোতিস্বরূপ ও নদীরূপে পূজিত। পুরাণে সরস্বতী বাগদেবী ও বিদ্যার অধিষ্ঠাত্রী দেবীরূপে বর্ণিত ।
আরও দেখুন :